সংবাদ প্রতিদদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের পুলিশ নাকি আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল যে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপর হামলা হতে পারে। আর সেই মর্মে সতর্কতাও জারি করা হয়েছিল। তবু বিপদ এড়ানো গেল না। পাকিস্তানের মিডিয়া এমনটাই জানাচ্ছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরও দাবি যে তিনি আগেভাগেই জানতেন যে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সৌকত খানুম হাসপাতাল থেকে শুক্রবার দেশের জনগণের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ইমরান। তাতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনিও বলেন, “হামলার এক দিন আগেই আমি খবর পেয়েছিলাম যে গুজরাটেরর ওয়াজিরাবাদে ওরা আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। এ ব্যাপারে পরে আমি আবার বিশদে জানাবো। আপাতত এটুকু বলতে চাই যে ওরা আমাকে চারটি গুলি করেছে। এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সানাউল্লা ও আইএসআইয়ের মেজর জেনারেল ফয়জল নাসিরের হাত রয়েছে।” বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে নাকি এ বিষয়ে গুজরনওয়ালা সিটি পুলিশের তরফে ১ নভেম্বরই সতর্কতাও জারি করা হয়। তাতে বলা হয় যে, গুজরনওয়ালায় লং মার্চ-এর সময় ইমরানের উপর হামলা হতে পারে। তাই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার। পুলিশ পরামর্শ দেয়, ইমরান যে গাড়িতে চড়ে প্রচার চালাবেন, সেটি যেন বিস্ফোরকরোধী হয় এবং তার সামনে যেন বুলেট-প্রুফ কাচ লাগানো থাকে। পাকিস্তানের গুজরাটের পুলিশ অফিসার আখতার আব্বাস মিডিয়াকে জানান, লাহোর থেকে লং মার্চ শুরু হওয়ার পর থেকেই পুলিশের তরফে ইমরানের পার্টি সদস্যদের বুলেট প্রতিরোধক বর্ম ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ফরাসি পার্লামেন্টে বর্ণবিদ্বেষের আঁচ, এক প্রতিনিধির বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে তুমুল শোরগোল]
এদিকে, এদিন এক ভিডিও বার্তায় ইমরান (Imran Khan) দাবি করেন, তাঁর উপর চরমপন্থীরা হামলা চালিয়েছে। তবে তার আগে চক্রান্ত করেই তাঁর নামে বিতর্কিত অডিও প্রকাশ করে তাঁকে ধর্মবিরোধিতার দায়ে দোষী বানানোর চেষ্টা চলছে। যাতে ব্যাপারটাকে এ ভাবে সাজানো যায় যে, তিনি ধর্মবিরোধিতা করেছেন বলেই তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিশেষ সূত্রে আগে থেকেই হামলার খবর পেয়েছিলেন। চক্রান্তকারীদের নাম জানার পর সেই নাম একটি ভিডিও টেপে রেকর্ড করে বিদেশে পাঠানোর সমস্ত ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। যদি কিছু হতো তবে সেই ভিডিয়ো টেপ যথাস্থানে পৌঁছে যেত।
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, কেমন আছেন ইমরান খান? পায়ে গুলি লাগার পর তিনি আর হাঁটতে পারবেন তো? বুলেটের আঘাত কতখানি গভীর ছিল? যদি ইমরান-ঘনিষ্ঠ ফয়জল হোসেনের বক্তব্য ধরা হয়, তা হলে দেখা যাবে, একটি নাইন এমএম বুলেটের স্প্লিন্টার এসে লাগে ইমরানের পায়ে। ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বলছে, ইমরানকে লক্ষ্য করে নাইন এমএম বুলেট চালানো হয়। আততায়ীরও তেমনই দাবি। তবে ব্যালাস্টিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাইন এমএম বুলেট স্প্লিন্টার হয় শার্পনেলে তখনই, যদি তা কোনও শক্ত জায়গায় গিয়ে আছড়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে তা ইমরানকে বহনকারী ট্রাক হতে পারে। আর সেই ট্রাকে বুলেট লাগার পর তা আঘাত করে ইমরানকে। শুক্রবার সংবাদসংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, ইমরান খানের ডান পায়ে মোট চারটি গুলি লেগেছে। অস্ত্রপচার সফল। বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল রয়েছেন, তবে আগামী তিন সপ্তাহ হাঁটাচলা করতে পারবেন না।
পাক মিডিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমরান খানের পায়ে সরাসরি বুলেট লাগেনি। তাঁকে প্রাথমিক ব্যান্ডেজ করার পরে দেখা গিয়েছে তাঁর পা থেকে ব্যান্ডেজ ছাপিয়ে কোনও রক্ত বের হচ্ছে না। ফলে আঘাত গুরুতর ছিল না বলেই তাঁদের মত। এদিকে, বলা হচ্ছে, সাধারণ নাইন এমএম বুলেট সরাসরি চলে যায় টার্গেটে। তবে এক্ষেত্রে কোনও বিশেষ বিস্ফোরক বুলেটের প্রসঙ্গ আসছে, যার আংশিক প্রভাব টার্গেটে লেগেছে বলে পাক মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। গতকালের গুলিচালনার ঘটনায় ইমরান খান ছাড়াও কমপক্ষে ১৫ জন পিটিআই সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে সিন্ধ প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর ইমরান ইসমাইল ও প্রাক্তন মন্ত্রী ফয়জল জাভেদও রয়েছেন। গুলিচালনার পরই পুলিশ ও পিটিআই সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেই সংঘর্ষেও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।