সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চারদিকে কান ফাটানো গোলা-গুলির আওয়াজ। বারুদের গন্ধে ভারী বাতাস। ভাঙা বাড়ির নিচে আটকে রয়েছে মৃতদেহ। গত ৭ মাস ধরে হামাস বনাম ইজরায়েল যুদ্ধে গাজার এই ধবংসের ছবি দেখছে বিশ্ব। কিন্তু এই ধ্বংসের মধ্যেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণে মৃত্যু হয়েছিল মায়ের। কিন্তু মাতৃ জঠরে তখনও বেঁচে ছিল শিশুটি। চিকিৎসকদের তৎপরতায় ভূমিষ্ঠ হয় নবজাতক। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছে সে।
কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ গাজার রাফায় হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলি ফৌজ। রাফা শহরের দুটি বাড়ি আছড়ে পড়েছিল মিসাইল। এই হামলায় প্রাণ হারান ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সাবরীন আল-সাকানি। কিন্তু যখন তাঁর মৃত্যু হয় গর্ভে প্রাণ ছিল সন্তানের। সাবরীনকে যখন উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয় তখনই সি-সেকশন করে বের করা হয় শিশুটিকে। ইজরায়েলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে সাবরীনের স্বামী ও ছোট্ট মেয়ে মালাকের। জানা গিয়েছে, মালাকের নাকি খুব ইচ্ছে ছিল ফুটফুটে বোনের। যার নাম রাখা হবে রুহ। বোনই হয়েছে মালাকের। কিন্তু সেই আদরের বোনের সঙ্গে খেলার ইচ্ছে আর পূরণ হল না দিদির।
[আরও পড়ুন: প্রেমিকাকে লাথি-ঘুসি মেরে নৃশংস হত্যা ভারতীয় বংশোদ্ভূতর, ২০ বছরের সাজা সিঙ্গাপুর আদালতে]
রয়টার্স সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে রাফার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে মা-বাবাহারা শিশুটির। এই হাসপাতালই এখন যেন তার বাড়ি হয়ে উঠেছে। জন্মের সময় মাত্র ১.৪ কেজি ওজন হয়েছিল তার। রাখতে হয়েছিল ইনকিউবেটরে। চিকিৎসক মহম্মদ সালামার তত্ত্বাবধানেই রয়েছে দুধের শিশুটি। কীভাবে কঠিন সময়ে তাকে পৃথিবীর আলো দেখানো হয়েছে সেই অভিজ্ঞতাই সংবাদমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছিলেন সালামার। তিনি জানান ধীরে ধীরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠছে শিশুটি। জন্মের পর তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন কাকা রামি আল-শেখ। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, "আজ যদি মালাক থাকতো বোন হয়েছে শুনে খুব খুশি হত। ঈশ্বর ওর কথা শুনেছে।"
প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দাবি, ইজরায়েলের এই হামলায় দুটি পরিবারের ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। ইজরায়েলি সেনার আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৩টি নিষ্পাপ শিশু। বলে রাখা ভালো, ৭ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। হামাস নিধনে এখনও গাজায় অগ্নিবর্ষণ করছে ইজরায়েলি ফৌজ। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। লক্ষ্য একটাই। হামাস জঙ্গিদের সমূলে বিনাশ করা। আর তার জন্য রাফায় ঢুকে অভিযান শুরু করতে চলেছে ইজরায়েলি বাহিনী।
কিন্তু কেন রাফায় ঢুকে আক্রমণ শানাতে এতটা মরিয়া ইজরায়েল? দক্ষিণ গাজায় অবস্থিত রাফা শহরটি মিশর সীমান্তবর্তী। যা এখন প্রায় ১৫ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়দের শেষ আশ্রয়। ইজরায়েলি সেনার হামলা থেকে বাঁচতে এই শহরের বহু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে ইজরায়েলের মারে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা ভূখণ্ড। উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা এমনকি মাটির নিচেও হামাস জঙ্গিদের ডেরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলি ফৌজ। তেল আভিভের অভিযোগ, এই রাফা শহরেই নতুন করে ঘাঁটি গাড়ছে জেহাদিরা। এখান থেকেই তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তাই হামাসকে পুরোপুরী শেষ করতে হলে এই শহরও তোলপাড় করতে হবে।