শেখর চন্দ্র, আসানসোল: গরু পাচার মামলায় ফের জেল হেফাজতে অনুব্রত মণ্ডল। আগামী ১১ নভেম্বর ফের আদালতে তোলা হবে তাঁকে। প্রভাবশালী তত্ত্বে অনুব্রতর জামিনের আরজি খারিজ করেন আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক।
অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) শনিবার সশরীরে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করা হয়। সওয়াল-জবাবের শুরুতে অনুব্রতর আইনজীবী চার্জশিটে তাঁর মক্কেলের (অনুব্রত মণ্ডলের) রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ নিয়ে আপত্তি করেন। দাবি করেন, এনামুল হক গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত। উনি শুল্কদপ্তর ও বিএসএফের উপর প্রভাব খাটিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সিবিআই তদন্ত করে দেখছে গরু পাচারে ঠিক কত টাকার লেনদেন হয়েছে। শাসকদলের জেলা সভাপতি হয়ে অনুব্রত গরু পাচারে প্রভাব খাটিয়েছেন কিনা। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নিশানা করে তদন্ত চলছে। অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গলের মোবাইল থেকে এনামুলের মোবাইলে ফোন গিয়েছিল। কিন্তু অনুব্রতর মোবাইল থেকে কোনও ফোন করা হয়নি। ভয়েস স্যাম্পল নেই। কোনও গরু পাচারকারীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও নেই। তাহলে কি রাজনৈতিক দল পরিবর্তন না করা পর্যন্ত উনি জামিন পাবেন না? এখনও পর্যন্ত পাঁচটি চার্জশিট জমা হয়েছে। অনুব্রতর চার্জশিট ৬০ দিনের মাথায় কেন দেওয়া হল? উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জামিন আটকানোর চেষ্টা চলছে।
[আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান! বাবাকে মারধরের পর নাবালিকাকে ‘অপহরণ’ তৃণমূল নেতার]
অসহযোগিতার অভিযোগ এবং প্রভাবশালী তত্ত্বের বিরোধিতাতেও সুর চড়ান অনুব্রতর আইনজীবী। তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে জেলে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন অনুব্রত সহযোগিতা করছেন না। চুপ থাকছেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ সঠিক নয়। উনি জানবেন তবে তো উত্তর দেবেন? শাসকদলের সভাপতি হওয়ার জন্য অনুব্রত প্রভাবশালী? উনি দলবদল করলে বা রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিলেই প্রভাবশালী তত্ত্ব সরে যাবে? তবেই মিলবে জামিন?”
সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুনানিতে অনুব্রতর আইনজীবী বলেন, “কোনও অজ্ঞাত কারণে তদন্ত শেষ হচ্ছে না। তদন্তের আর কিছু নেই।” অনুব্রতর একাধিক শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে। জেলে পর্যাপ্ত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার কথা ছিল। তবে তা সত্ত্বেও জেল হেফাজতের মোট ৭৯ দিনে তেমন চিকিৎসা পরিষেবা অনুব্রত পাননি বলেই অভিযোগ তাঁর আইনজীবীর।
যদিও প্রথম থেকে জামিনের আবেদন খারিজের পক্ষে জোরাল সওয়াল করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। শনিবার আরও কয়েকজন সাক্ষ্যের নাম সিডিতে জমা দেওয়া হয়। তিনি জানান, তদন্ত চলছে। অনুব্রত প্রভাবশালী। তাই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করা হোক। আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, গরু পাচারের সঙ্গে অনুব্রতর যোগ ঠিক কোথায়? জামিন দেওয়া হলে সাক্ষ্যদের কীভাবে প্রভাবিত করতে পারেন অনুব্রত? তদন্ত শেষ করতে আর কত দিন সময় লাগবে? আরও ২ মাস সময় লাগবে, উত্তরে জানায় সিবিআই। দু’ পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে অনুব্রতর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে অনুব্রত। ১১ নভেম্বর আবার আদালতে তোলা হবে তাঁকে।