shono
Advertisement

Breaking News

কেউ পুত্রহারা, চলে গেলেন কারও বাবা, ট্রলারডুবিতে স্বজনহারাদের কান্না নামখানার ঘরে ঘরে

কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন ২ মৎস্যজীবী।
Posted: 11:25 AM Jul 16, 2021Updated: 12:42 PM Jul 16, 2021

সুরজিৎ দেব, নামখানা: নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসারে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সমুদ্রে যাওয়া। কিন্তু কেউ ফেরে, কেউ ফেরে না। সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়ে বুধবার ভয়ংকর ট্রলারডুবির ঘটনায় দু’জন প্রাণে বাঁচলেও মৃত্যু হয়েছে ১০ মৎস্যজীবীর (Fishermen)। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নিখোঁজ থাকা আরও এক মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধার হয়েছে সমুদ্র থেকে। তাঁরা সকলেই নামখানার হরিপুর, দেবনিবাস, পাতিবুনিয়া, মহারাজগঞ্জ, শিবপুর, রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামগুলিতে নেমেছে শোকের ছায়া। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ মৃতদের পরিবার পরিজন।

Advertisement

দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে, কেউ ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর। ৬২ বছরের বৃদ্ধ বাবা গোপাল দাসের এখন ভগবানের কাছে একটাই চাওয়া। পরপারে ছেলেদের যেন তিনি ভাল রাখেন। নামখানার (Namkhana) দেবনিবাসের বাসিন্দা গোপাল দাসের দুই ছেলে সৈকত ও সৌরভ দু’জনেই প্রায় সপ্তাখানেক আগে এফ বি হৈমবতী ট্রলারে চেপে সমুদ্রে মাছ ধরতে বের হন। বুধবার ভোরে সমুদ্র থেকে ফেরার পথে ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরে রক্তেশ্বরী চরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উলটে যায়। ট্রলারের খোলের মধ্যেই আরও ছয় মৎস্যজীবীর সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন দুই ভাই। ভিতর থেকে বেরোতে পারেননি তাঁরা। ট্রলারের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় তাঁদের মৃতদেহ।

[আরও পড়ুন: মঙ্গলকোটে TMC নেতা খুন: তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই কাজে নামলেন CID আধিকারিকরা]

দুই ছেলে সৈকত ও সৌরভের মৃত্যুর খবর শোনামাত্রই অসুস্থ মা শোকে পাথর। চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে তাঁর। কথা বলতেই পারছেন না। বাবা গোপাল দাস দুই ছেলের জন্য কেঁদেই চলেছেন। বলেন, “ আমার দুটো সন্তানকেই ভগবান নিয়ে নিয়েছেন। আজ আমি নিঃস্ব। সব শেষ হয়ে গেল। কখনও ভাবিনি, আমি বেঁচে থাকব, ছেলেরা চলে যাবে।” চোখের জল মুছতে মুছতেই তাঁর প্রশ্ন, “আমি তো ভগবানে বিশ্বাস করি। কী এমন দোষ করলাম যে ভগবান ওদের কেড়ে নিলেন আমার কোল থেকে। সত্যিই যদি তিনি থেকে থাকেন তবে চাইব ভগবান যেন ওদের শান্তি দেন। ওরা যেখানে গিয়েছে, সেখানে যেন ভাল থাকে।” শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদেই চলেছেন সৈকতের স্ত্রী। প্রতিবেশী বুদ্ধদেব জানারও প্রার্থনা, ওরা যেন ভাল থাকে।

ট্রলার দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সুরজিৎ। ওর বাবা বুদ্ধদেব মাইতির নিথর দেহ উদ্ধার হয় বুধবার রাতে হৈমবতী ট্রলারের খোলের ভিতর থেকেই। ও এখনও জানে না বাবা আর তার কাছে আসবে না কোনওদিনই। ছোট্ট সুরজিৎ জানায়, “বাবা মাছ ধরতে গিয়েছে। কবে ফিরবে জানিনা।” ছেলে বারবারই তার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, “বাবা কবে আসবে?” ছেলের প্রশ্নের কোনও উত্তরই নেই বুদ্ধদেবের স্ত্রী সাবিত্রীর কাছে। স্বামী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। শুধু কেঁদেই চলেছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই জানান, “তুমি কোথায় চলে গেলে? তোমায় তো আমি বড় ভালবাসি গো। তোমায় ছাড়া কোথাও যাই না গো। এখন আমি কী করব?” কাঁদতে কাঁদতে নিজের মনেই বলে চলেছিলেন, “এই সেদিনও তো তুমি ফোন করে বললে, আমরা বাড়ি ফিরছি। বললে, মশারিটা ঠিক করে টাঙাস। নইলে গেঁড়িপোকা বাচ্চাদের কামড়াবে। ওদের খেয়াল রাখিস। আমাদের ফেলে তুমি কোথায় চলে গেলে? তুমি কেন গেলে? আমি তো যেতে দিতে চাইনি তোমায়।”

বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজের তালিকাতেই ছিলেন বছর পঞ্চান্নর অনাদি শাসমল। স্বামী-স্ত্রী ও দুই ছেলে, তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। একমাত্র রোজগেরে। ট্রলারের (Trawler) খোলের মধ্যে দেহ উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষীণ আশা ছিল স্ত্রী সারথীদেবীর। টালির ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরের বাসিন্দা সারথী শাসমল জানান, “পায়ে ধরে ওনাকে কত বললাম, তোমার বয়স হয়েছে আর সমুদ্রে যেও না। শুনল না আমার কথা। বলল, ঘরটা করি। ঘর করার পর আর যাব না।” তিনি এদিন সকালেই জানিয়েছিলেন, “হয়তো ভেসে গিয়ে কোথাও গিয়ে উঠবে। ফিরবে বাড়িতে। ফিরলে আর কখনওই ওকে যেতে দেব না। বলব অন্য কাজ করো।” বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অনাদি শাসমলের দেহ মিলেছে বকখালির কাছে সমুদ্র তীরবর্তী দোনলা এলাকা থেকে। সে কথা আর কখনও স্বামীকে বলা হবে না তাঁর।

[আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুর্শিদাবাদে চায়ের দোকানে ধাক্কা ডাম্পারের, ঘটনাস্থলেই মৃত ৪]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার