সুকুমার সরকার, ঢাকা: লকডাউনের ওঠার পর থেকেই বাংলাদেশে বেড়েই চলছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় এই মারণ ভাইরাস্রে জেরে এক রোহিঙ্গা-সহ ৩৭ জন মারা গিয়েছেন। একই সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯১১ জন। বাংলাদেশে একদিনে করোনার সংক্রমণের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। এদিকে ৩৭ জনের মৃত্যুর দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭০৯ জন। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছল ৫২ হাজার ৪৪৫ জনে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.নাসিমা সুলতানা নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৭০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১৪ হাজার ৯৫০টি। এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৩টি।
[আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্তের থেকে উপসর্গে মৃতের সংখ্যা বেশি, চিন্তায় হাসিনা প্রশাসন ]
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখেই কর্মস্থলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই না, দেশের মানুষ কষ্ট পাক। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্বের নির্দেশ অর্থাৎ যেগুলো বন্ধ ছিল, সেগুলো উন্মুক্ত করেছি। খেটে খাওয়া, সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত, প্রত্যেকে যাতে তাঁদের জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারেন। সচল রাখতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। কাজেই আমাদের সবাইকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখেই কর্মস্থলে কাজ করে যেতে হবে।’
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বৈঠকের মধ্যেই এই কথা বলেন তিনি। এই বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বর্তমান পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘খুব বেশিদিন এই রকম অবস্থা থাকবে না। আমরা যে কোনও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারব। সেভাবেই আমাদের সবাইকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখে কর্মস্থলে কাজ করে যেতে হবে। আমরা দেশের অসহায় মানুষের কথা বেশি চিন্তা করি। করোনায় শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব বলতে গেলে স্থবির। সব জায়গায় এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। আমরাও তার বাইরে না। আমাদের অর্থনীতি যে গতিতে চলছিল, করোনা ভাইরাস আসার পর তা থমকে গিয়েছে। তবে এই অবস্থা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই চলছে। দেশবাসীকে বলব, স্বাস্থ্যবিধি যেগুলো দেওয়া হয়েছে সবাই সেটা মেনে চলবেন। আমরা সেটাই চাই। কারণ দেশের মানুষ কষ্ট পাক এটা আমরা কখনই চাই না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যা যা বন্ধ ছিল, সব খুলে দিয়েছি। তবে এবার সবাইকে চলাফের-সহ সব কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
[আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রুখতে ভারতের পথে বাংলাদেশ, চিহ্নিত লাল-সবুজ-হলুদ জোন]
প্রশাসন সূত্রে খবর, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭১ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই রোহিঙ্গার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মহম্মদ সামছুদ্দৌজা। তিনি বলেন, ‘উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের একটি ব্লকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৭১ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা অসুস্থ হন। পরে ৩১ মে ওই রোহিঙ্গা নিজের ঘরেই মারা যান। এরপর তাঁর শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে রিপোর্ট আসে। মৃত্যুবরণ করা রোহিঙ্গাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কবর দেওয়া হয়েছে করা হয়েছে।’
The post বাংলাদেশে করোনার বলি রোহিঙ্গা-সহ ৭০৯, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৫০ হাজারের গণ্ডি appeared first on Sangbad Pratidin.