কৃষ্ণকুমার দাস: একদিকে প্রতি বছর বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ ভারতে আসেন চিকিৎসা, ব্যবসা-সহ হাজার প্রয়োজনে, আরেক দিকে পদ্মাপাড়ে বাড়ছে ভারত বিরোধিতা! একদিকে জয়া এহসান, চঞ্চল চৌধুরীর মতো অভিনেতা পশ্চিমবঙ্গের ছবিতে চুটিয়ে অভিনয় করছেন, আরেক দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম… মৌলবাদী শক্তিগুলো হামলা চালাচ্ছে হিন্দুপাড়ায়। বিশ্লেষকদের মতে, অশান্তির সেই আগুনেই বাড়ছে অনুপ্রবেশ। এই আবহাওয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অতি গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনা। বিশেষত পুরাণ ঢাকার শাঁখারি পাড়ার মতো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। রবিবার কেমন ভোট হল সেখানে?
শাঁখারি পাড়া ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের মধ্যেও রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও আতঙ্ক। যদিও দুবারের কাউন্সিলর আওয়ামি লিগ নেতা ৭১ বছর বয়সী সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধি রঞ্জন বিশ্বাস। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার সময় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দলীয় কর্মীদের মানববন্ধনে বেঁচে যান নেত্রী। কিন্তু শরীরে স্প্রিন্টার গেঁথে গুরুতর জখম হন রঞ্জন। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা পা বাদ দেওয়ার কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত কলকাতায় চিকিৎসা হয়। পা বাদ যায়নি ঢাকার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলরের।
[আরও পড়ুন: অক্ষয় মহারাজের আশীর্বাদ মাথায় বাংলাদেশে ভোটের লড়াইয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী]
শাঁখারি পাড়ার ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার মতো। এর মধ্যে ১৪ হাজারই হিন্দু। এলকায় রয়েছে কালী, শিব, রাধাকৃষ্ণ জিউর মন্দির। অনেকেই শাঁখারি পাড়াকে বলে থাকেন, ঢাকার এক টুকরো উত্তর কলকাতা! যেখানে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করছে বহু বছর ধরে। রবিবারও দেখা গেল হিন্দু মহিলারা ভোটের লাইনে। বিকেল অবধি ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে। আরও বেশি ভোট পড়ার কথা ছিল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আওয়ামি তথা হাসিনার জয় নিশ্চিত জেনেই অনেকে ভোট দিতে যাননি।
এই নিশ্চিন্তির মধ্যেও আশঙ্কার আগুন উঁকি দিচ্ছে! শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের একটি চুক্তির পরে শাঁখারি পাড়ায় শঙ্খের ব্যবসা কমেছে। বহু ব্যবসায়ী নাকি ভারতের ব্যারাকপুরে চলে এসেছেন। তাছাড়া প্রশ্ন উঠছে, যখন গোটা বাংলাদেশে মৌলবাদীদের দাপট বাড়ছে, তখন আর কতদিনই বা নিরাপদ শাঁখারি পাড়ার সম্প্রতি? মুক্তিযোদ্ধা তথা স্থানীয় নেতা রঞ্জন বিশ্বাসেরও বয়স হল। তারপর কে?
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রীর ছেলে দিলেন ছাপ্পা! কেন্দ্রের ভোট বাতিল কমিশনের]
বাংলাদেশে শারোদোৎসব উজযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য সত্য ব্রহ্মের বক্তব্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দুদের পাশে আছেন। দেখভাল করছেন। তবে ভারত সরকার বিশেষ কিছু নীতি নিলে, আরও উদ্যোগী হলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ভালো থাকত। রঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে একই সুরে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান যেভাবে ভারতীয় মুসলমানদের নিয়ে রাজনীতি করে, ভারতও যদি ঠিক সেই ভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে কূটনীতির ময়দানে সরব হয় তাহলে পদ্মাপারের সংখ্যালঘুদের জন্য পরুিস্থিতি হয়তো আরও ঙালো হত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লষকদের বক্তব্যও তাই। তাঁরাও প্রশ্ন তুলছেন, কেন পূর্বপুরুষের ভিটে ছাড়বেন মানুষগুলো? কেন শিকড়হীনতাই অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র উপায় হবে?