সুকুমার সরকার, ঢাকা: মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সুন্দরবনের স্বাদ পায় সে। তারপর সময়ের সঙ্গে শুরু হয় এক নতুন জীবন। অপরাধ জগতে প্রবেশ করে বাঘ শিকারের ওস্তাদ হয়ে ওঠে হাবিব তালুকদার ওরফে ‘টাইগার হাবিব’। সুন্দরবনে ত্রাসের আরেক নাম হয়ে ওঠে সে। প্রায় দুই দশকে ৭০টি বাঘ মেরে অবশেষে শুক্রবার পুলিশের জালে পড়েছে বাংলাদেশের এই মোস্ট ওয়ান্টেড চোরাশিকারি।
[আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের টাকাও আত্মসাৎ করেছে হেফাজত নেতারা, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
সূত্রের খবর, ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে শরণখোলা থানার পুলিশ। এতবছর ধরেও এই মোস্ট ওয়ান্টেড বাঘ খুনির ঠিকানা খুঁজে পায়নি পুলিশ। অবশেষে গোপন খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হাবিবকে। শনিবার ধৃতকে স্থানীয় আদালতে তোলা হলে, জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। জানা যায়, হাবিবের বাবা ছিলেন মৎস্যজীবী। পরে অপরাধের দুনিয়ায় পা রাখে সে। নাম লেখায় জলদস্যুদের দলে। বাবার হাত ধরে ছোট থেকেই সুন্দরবনের গভীরে যাতায়াত শুরু করে হাবিব। শুরুতে সে মধু সংগ্রহ, মৎস্যজীবীর পেশা বেছে নিয়েছিল। কিন্তু চোরাশিকারের চক্রে জড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। প্রথমে হরিণ মেরে মাংস, চামড়া বিক্রি। তারপর বাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল শিকারের দক্ষতাই এই কুখ্যাত চোরাশিকারির নামের আগে জুড়ে দিয়েছিল ‘টাইগার’ শব্দটি। তার এক ছেলে ও জামাইও এই অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে খবর।
সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) ভোলা টহল ফাঁড়ি ইউনিটের দলনেতা মহম্মদ খলিল জমাদ্দার জানান, বছর দুয়েক আগে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের লাঠিমারা এলাকায় বনের মধ্যে একটি বাঘকে মৃত ভেবে কাছে গেলে বাঘের আক্রমণের মুখে পড়ে হাবিব। তবে সেবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে। তিনি আরও বলেন, বাঘের চামড়া, হাড়-গোড়, দাঁত-সহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চড়া দামে বিক্রি হয়। এগুলো দেশের বাইরে পাচার হয়। হাবিবরা সুন্দরবন থেকে বাঘ মেরেই কাজ শেষ করে। কিন্তু যাদের মাধ্যমে হাবিবরা বাঘ হত্যায় উৎসাহ পাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই। যে কোনও মূল্যে এদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।