সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হিংসাত্মক কোটা আন্দোলনে কার্যত 'মৃত্যু উপত্যকা' হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। মৃতের সংখ্যা শতাধিক। আহত অসংখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুড়ছে গোটা দেশ। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে, কারফিউ জারি করে, সেনা নামিয়ে পরিস্থিতি শোধরানোর চেষ্টা করছে হাসিনা সরকার। পাশাপাশি শাসক শিবিরের অভিযোগ, ছাত্রদের এই আন্দোলনের আড়ালে ষড়যন্ত্র শামিল বিএনপি ও জামাতের মতো মৌলবাদী বিরোধী গোষ্ঠী। নেপথ্যে বিদেশি শক্তিরও হাত রয়েছে। এই দাবির যৌক্তিকতা কতখানি? তেমনটা আদৌ সম্ভব?
আন্তর্জাতিক কুটনীতি অনুযায়ী বর্তমানে জটিল অবস্থানে রয়েছে আওয়ামি লিগ শাসিত বাংলাদেশ। একদিকে যেমন ভারতপন্থী হাসিনা সরকার, অন্যদিকে চিনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতাও সকলের জানা। বন্ধু ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক রীতমতো ভালো, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক সাপে-নেউলে, একথা জেনেও বাংলাদেশ পরিকাঠামো উন্নয়নে বেজিংয়ের ব্যাপক সাহায্য নিয়ে চলেছে। চলতি জুলাই মাসের শুরুতে চিন সফরে বেজিংয়ের থেকে ১ বিলিয়ান মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস আদায় করেছেন হাসিনা। সব ঠিক থাকলে ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিকাঠামো উন্নয়ন, বিপর্যয় মোকাবিলা, ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করবে চিন। এছাড়াও বাংলাদেশের থেকে কৃষিপণ্য কেনার বিষয়েও চুক্তি হয়েছে বলে খবর। অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সেনাঘাঁটি বানানোর মার্কিন আর্জি খারিজ করেছে ঢাকা। স্বভাবতই যা পছন্দ হয়নি ওয়াশিংটনের। প্রশ্ন উঠছে, এর পরেই কি পাকিস্তান লবির পাশাপাশি সিআইএও সক্রিয় হয়েছে পদ্মাপাড়ে?
[আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতির হাল কেমন! বাজেটের আগে আর্থিক সমীক্ষায় জানা যাবে ভাঁড়ারের হাল]
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, হঠাৎই যেভাবে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে পড়ুয়াদের আন্দোলন, তাতে কলকাঠি নেড়েছে আসলে শাসকবিরোধী গোষ্ঠীই। বিএনপি, জামাতের উসকানিতেই সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস শুরু হয়। ঢাকায় সরকারি টিভি চ্যানেল বিটিভির কর্যালয়ে আগুন লাগানো হোক কিংবা নরসিন্দিতে জেল ভেঙে কয়েদিদের মুক্ত করার মতো অরাজকতা শিক্ষার্থীদের কাজ হতে পারে না। বলা বাহুল্য, ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে দু'ভাগে বিভক্ত। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, বন্ধু ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ধর্মের ঊর্ধ্বে ভাষাবন্ধনের একটি দেশ। অন্যদিকে ইসলামী মৌলবাদ তথা পাকিস্তানপন্থী মনোভাব। এইসঙ্গে তুমুল ভারত বিরোধিতা। দীর্ঘদিন যাবৎ এই পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদীদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে মুজিবকন্যা হাসিনাকে।
[আরও পড়ুন: বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়! দুমড়ে মুচড়ে গেল গাড়ি]
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে সক্রিয় হয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা ISI। তেমনই তলে তলে CIA-এও যদি হাসিনাকে হঠিয়ে নিজের পছন্দ পুতুল সরকার বসানোর কৌশল নেয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নয়। কারণ সেন্ট মার্টিনের সেনাঘাঁটির প্রস্তাব নাকচ হওয়াকে একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি পেন্টাগন। অপরপক্ষে চিনের সঙ্গে হাসিনা সরকারের ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি জটিলতা বাড়িয়েছে।এখন দেখার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে ছাত্রদের এই আন্দোলনকে শামাল দেন। তার উপরেই নির্ভর করছে তাঁর গদির মেয়াদ।