সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাঙালির প্রজন্মের পর প্রজন্মের বেড়ে ওঠা তার একাত্তরের রক্তলেখা ইতিহাস নিয়ে। ৩০ লক্ষ শহিদ আর ১০ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হারিয়ে ভারতকে পাশে পেয়ে রক্তক্ষয়ী ৯ মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই পুণ্যভূমিতেই কিনা কারও মুখে বাংলা হরফে লেখা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’! মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-২০ ম্যাচে দর্শক গ্যালারিতে চাঁদ-তারা পতাকা! বাংলাদেশের বুকে যেভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন জানানো হয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
একাধিক টেলিভিশন ও ডিজিটাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে শুদ্ধ বাংলায় পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকে। যা কষ্ট দিয়েছে বহু বাঙালিকে। বাঙালির কাছে গর্বের লাল-সবুজ পতাকা। অথচ নিজের দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ‘পিয়ারে পাকিস্তান’ নামে গলা ফাটাচ্ছেন, তাঁরা আসলে নিজেদের পরিচয়হীনতারই পরিচয় দিচ্ছেন বলেই তোপ দেগেছে নেটদুনিয়ার একাংশ। বিপথে যাওয়া প্রজন্মের এই ছবি নিয়ে শঙ্কিত মাশরাফি মোরতাজারাও। অনুশীলনে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করায় ব্যথিত দেশের বিশিষ্টজনরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই।
[আরও পড়ুন: India vs New Zealand: এই নাহলে ক্যাপ্টেন! ইডেনে সতীর্থর খেলাকে স্যালুট জানালেন রোহিত, দেখুন ভিডিও]
এমনকী গ্যালারির এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও। ঢাকায় পা রাখার পরই বাবর আজম জানিয়েছিলেন, “বাংলাদেশে আমাদের অনেক সমর্থক রয়েছে। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার সময়ই অনেককে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখেছি।” দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচের পর আরেক তারকা ফখর জামান বলেছিলেন, “এখানে এত সমর্থন পাব, আমার তো একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ ২০১৮ সালেও আমি এসেছিলাম এখানে। তখন এত পাক সমর্থক দেখিনি। যত লোক আসছে, আমাদের সমর্থন করছে, তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। বিশ্বাসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পাকিস্তানেই খেলা হচ্ছে।”
পাকিস্তান দল ঢাকায় আসার পর থেকেই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মেন গেটে ভিড় জমিয়েছিলেন উৎসাহী সমর্থকরা। বাংলাদেশে পড়তে আসা কাশ্মীরি কিছু তরুণ-তরুণীও মুখে পাকিস্তানি পতাকা এঁকে মাঠে এসেছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের মুলতান তাঁদেরই একজন। ঢাকায় একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ছেন তিনি। বাংলাদেশি ক্রিকেটার মাশরাফি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “তাদের (পাকিস্তান) পতাকা তাদের দেশের মানুষ ছাড়া আমাদের দেশের মানুষ ওড়াবে, এটা দেখে সত্যিই কষ্ট লাগে। যে যাই বলুক, ভাই দেশটা কিন্তু আপনার।”
সাকলিন মুশতাক পাক দলের কোচ হওয়ার পরই পতাকা টাঙিয়ে অনুশীলন করার নিয়ম চালু করেছেন। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ থেকেই বাবর আজমরা এই নিয়ম পালন করছেন। মিরপুরে এসেও দেখা যায় একই ছবি। কিন্তু এ নিয়ে আপত্তি ওঠায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে সরকারি অনুমতি নিয়েছে তারা। একেই সিরিজে পাকিস্তানের কাছে ৩-০-য় সিরিজ হার, তার উপর পাক সমর্থকদের উৎসাহ- সব মিলিয়ে ছিন্নভিন্ন বাংলাদেশ।