সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকে পাওয়া ত্রাণের অর্থে নয়ছয়ের অভিযোগ খারিজ করে দিল রাষ্ট্রসংঘ৷ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার আঞ্চলিক শাখার আধিকারিক খালেদ খলিফা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে সাফ জানিয়েছেন, কোনও অর্থের অপচয় হয়নি৷ সব যথাযথভাবেই রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে৷
[ আরও পড়ুন : একাত্তরের গণহত্যা ইস্যুতে চাপ বাড়ল পাকিস্তানের, বাংলাদেশের পাশে রাষ্ট্রসংঘ]
এর আগে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় গঠিত তহবিলের অর্থ তছরূপের অভিযোগ ওঠে। বলা হয়- রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে, তার সিংহভাগই খরচ হচ্ছে ত্রাণকার্যে মোতায়েন কর্মীদের থাকা-খাওয়ার জন্য। ত্রাণকার্যে বরাদ্দ তহবিল নিয়ে অভিযোগ করেন দেশেরই মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। রীতিমত তথ্য দিয়ে তিনি জানান, ২০১৮-র সেপ্টেম্বর থেকে গত ছ’ মাসে বাংলাদেশে থাকা এনজিও কর্মীদের হোটেল বিল বাবদ খরচ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। এছাড়াও ফ্ল্যাট ভাড়ায় ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বরাদ্দের চারভাগের মধ্যে তিনভাগই ব্যয় হয়েছে ত্রাণকার্যে মোতায়েন কর্মীদের থাকা-খাওয়ার জন্য। ফলে বরাদ্দ অর্থের প্রায় অধিকাংশই পৌঁছায়নি রোহিঙ্গাদের কাছে। মায়ানমার সেনার অভিযানে সেখান থেকে বিতাড়িত প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা আপাতত আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে। ফলে বিপুল চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এমনই পরিস্থিতিতে হাসিনা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত-সহ একাধিক দেশ। ত্রাণকার্যে নেমেছে দেশি-বিদেশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।
[ আরও পড়ুন : নজরে রোহিঙ্গা সমস্যা, এপ্রিলের শুরুতে ভারত-বাংলাদেশ বৈঠক]
এদিকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করা হল ভাসানচরে৷ হাসিনা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। সোমবার রাষ্ট্রসংঘের বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে৷ এতে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে বাড়তি চাপ কমছে৷ রাষ্ট্রসংঘ বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগের পাশে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে৷ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর আগে তাঁদের নিরাপত্তা ও জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে আলোচনা করেছে হাসিনা প্রশাসন। বিশ্বের কয়েকটি দেশ মিলে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গা সংকটের যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কী পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন, সে সর্ম্পকে ধারণা করে যান। তারপরই তাঁরা বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠাবেন৷ তাঁদের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের ৯২০.৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এর মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে এখনও পর্যন্ত৷ বাকি অর্থের জন্য অন্যান্য সহায়তা দেশগুলির কাছে সাহায্যের আবেদন জানানো হবে৷