নিজস্ব সংবাদদাতা: ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারিতে উত্তাল বাংলাদেশ। দিকে দিকে প্রতিবাদে শামিল হিন্দুরা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতও। এই পরিস্থিতিতে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী সাফ জানিয়েছেন, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে আগেই ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। এর দায় ইসকন নেবে না। এমনটাই দাবি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো'র।
বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার স্বামীবাগ আশ্রমে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, "চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঘিরে ভারতের মন্তব্য বা অবস্থানের সঙ্গে ইসকনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। কোনও দেশের কোনও ব্যক্তি চিন্ময়কে নিয়ে কী উদ্যোগ নিল বা কী বলল, সে জন্য ইসকন দায়ী নয়।" লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, 'সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছড়ানোর এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চলছে। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কিছু মহল আমাদের সংগঠনকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এই অপচেষ্টা চরমে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের অন্যায়ভাবে দায়ী করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের যুক্ত নেই। কয়েক মাস আগেই প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের সাংগঠনিক পদ-পদবী-সহ যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ৩ অক্টোবর বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় যে, চিন্ময় দাস ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত।'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে মামলা করা হয় আদালতে। পদ্মাপাড়ের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশিস রায় চৌধুরীর বেঞ্চে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। ফলে মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায় বিচার ব্যবস্থার কড়া সিদ্ধান্তে। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে।
চলতি নভেম্বর মাসে এই হিন্দু নিপীড়ন আরও লাগামছাড়া হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৫ নভেম্বর ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন চট্টগ্রামের এক মুসলিম ব্যবসায়ী। ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’-এর তকমা দেন তিনি। যার পরই স্থানীয় হিন্দুদের বিক্ষোভে কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নেয় চট্টগ্রাম। সেই বিক্ষোভ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মাঝেই ইসকন মন্দিরের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আনা হয়েছে। খারিজ হয়েছে জামিন। যা নিয়ে হিন্দুদের বিক্ষোভে এখন উত্তাল বাংলাদেশ। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতও।