সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইঙ্গিত ছিল মুজিবর রহমানে মূর্তি ভাঙাতে। ইঙ্গিত ছিল শেখ হাসিনার পতনের পর দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণে। বোতলের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়েছে জিন! সেই জিনের নাম জামাতে ইসলামি। সমস্যা হল 'জিন' আর 'আকা'র, অর্থাৎ কিনা বিএনপির কথা শুনছে না! এমনকী সেই এখন মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে খবর। সব মিলিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে 'বিশ্বস্ত' সঙ্গীকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। প্রকাশ্যে জামাতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে খালেদা জিয়ার দল। এমনকী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির সংবাদমাধ্যমে সরাসরি জানিয়েছেন, জামাতের সঙ্গে এই মুহূর্তে তাঁদের কোনও বোঝাপড়া নেই। প্রশ্ন হল, হঠাৎ এতখানি বিচলিত কেন খালেদার দল?
বিএনপি আসলে দু'রকম আশঙ্কায় ভুগছে। প্রথমত, এতদিনে খালেদার দলের কাছে স্পষ্ট, বাংলাদেশে ইসলামি শাসন প্রণয়নের তৎপর হয়েছে জামাত। এই বিষয় সরাসরি অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। শুক্রবার বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, জমাতের ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না বাংলাদেশের মানুষ। দ্বিতীয়ত, গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবভঙ্গি। রাষ্ট্রগড়ার আছিলায় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফেরানোর বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নির্বাক তারা। ফখরুলের বক্তব্য, ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার’ আদতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যাদের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। যদিও প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে একটি কথাও বলছেন না।
[আরও পড়ুন: বিজেপির দাবিতে সায় কমিশনের, পিছিয়ে গেল হরিয়ানার ভোট]
বিএনপির উদ্বেগ বাড়ছে রাষ্ট্রচালনায় জামাতের ক্রমশ বাড়ন্ত প্রভাব দেখে। বিএনপির মনে করছে, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হওয়া সত্বেও গুরুত্ব পাচ্ছে না তারা। বরং 'মৌলবাদী' জামাত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে উপদেষ্টাদের কাছে। নিয়োগ এবং বদলির ক্ষেত্রেও জামাতের পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্ব পাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। শুক্রবারও ৮১ জন বিচারককে বদলি করেছে সরকার। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা-পুত্র তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে ফেরানোর বিষয়ে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, তারেককে দেশে ফিরতে হলে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা একাধিক দুর্নীতির মামলা তুলে নিতে হবে। সেই বিষয়ে উপদেষ্টা সরকারে হেলদোল নিয়ে বলেই দাবি বিএনপির।
উদ্ভূত পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ হাসিনার আওয়ামি লিগ এবং খালেদার বিএনপিকে ক্রমশ কাছে নিয়ে আসছে। একদিকে যেমন আওয়ামি নেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ‘দেশের স্বার্থে যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির উদ্দেশে। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব ফখরুলও বলেছেন, "বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আওয়ামি লিগের সঙ্গে কাজ করতে আমাদের অসুবিধা নেই।" তবে দেশের বর্তমান হাওয়ার কথা মাথায় রেখে ফখরুল যোগ করেন, "গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে তারা (আওয়ামি লিগ) যেভাবে ধ্বংস করেছে, তার জন্য আওয়ামি লিগকে জবাবদিহি করতে হবে।" যদিও এইসঙ্গে আওয়ামি নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ঢালাও খুনের মামলা দেওয়া এবং আদালতে তাঁদের মারধর খাওয়ানো নিয়ে সরব হয়েছেন ফখরুল।
[আরও পড়ুন: অসম বিধানসভায় বন্ধ নমাজের বিরতি, ফুঁসে উঠে বিজেপিকে বিঁধল নীতীশের দল]
রাজনৈতিক ডামাডোলের এই আবহে শনিবার ঢাকার যমুনা অতিথিশালায় নিজের দপ্তরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস। তবে নির্বাচন নিয়ে নয়, সেখানে রাষ্ট্রসংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। অন্য দিকে বিএনপি মহাসচিবের সাফ কথা, "মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সংস্কারে আমরা বিশ্বাসী নই। নির্বাচিত সরকার গঠনেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।" আদতে আওয়ামি যে আশঙ্কার কথা হিংসাত্মক কোটা আন্দোলনের আগে বলেছিল, যে উদ্বেগ থেকে জামাতকে নিষিদ্ধ করেছিল হাসিনা সরকার, এখন সেই চিন্তায় কাঁটা খালেদা জিয়ার বিএনপিও। বাংলাদেশের এই নয়া সংকটই সেতু বাঁধছে বিএনপি ও আওয়ামির মধ্যে।