সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বদলের বাংলাদেশে এবার 'বদলা'র নয়া অধ্যায়। এবার কেড়ে নেওয়া হল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভোটাধিকার। দেশের বাইরে থেকে আর ভোট দিতে পারবেন না মুজিবকন্যা। এমনকী তাঁর পরিবারের কারও আর ভোটাধিকার রইল না। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, হাসিনার ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র 'লক' করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি দিল্লিতে বসে আর ভোট দিতে পারবেন না। উল্লেখ্য, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে একাধিক সংস্কার চলছে নির্বাচন কমিশনের আওতায়। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনার ভোটাধিকার বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে 'বদলা'রই প্রতিফলন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশে গণ-অভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এই মুহূর্তে দিল্লির আশ্রয়ে রয়েছেন মুজিবকন্যা হাসিনা (PM Sheikh Hasina)। তাঁর পরিবার ও দল আওয়ামি লিগের অনেক হেভিওয়েট নেতা, মন্ত্রীও আশ্রয় নিয়েছেন দেশের বাইরে। হাসিনা, তাঁর সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার মামলা দায়ের হয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়া চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধদমন আদালতে। পরিস্থিতি এমনই যে হাসিনা দেশে পা রাখলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এদিকে, দেশে স্থিতাবস্থা ফেরাতে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একাধিক সংস্কারের মাধ্যমে ভোট প্রস্তুতি শুরু করেছে। সেই কাজেই তাদের সাম্প্রতিকতম সংযোজন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)বাতিল।
কমিশনের এই পদক্ষেপের জেরে তিনি দিল্লিতে বসে আর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। আবার যদি বাংলাদেশে এসে ভোট দিতে চান, তাতে বাধা। বিচারপ্রক্রিয়া চলায় হাসিনা দেশে পা রাখলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রেও তাঁর ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। সামগ্রিকভাবে কমিশনের এই পদক্ষেপ মুজিবকন্যার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পথ মসৃণ করার চেষ্টা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। শুধু হাসিনাই নন। নির্বাচন কমিশন সূত্র খবর, হাসিনার বোন শেখ রেহানা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সাইমা ওয়াজেদ পুতুলেরও জাতীয় পরিচয়পত্র 'লক' করে ফেলা হয়েছে। এই মুহূর্তে সজীব, পুতুল রয়েছেন আমেরিকায়। আর শেখ রেহানা হাসিনার সঙ্গে দিল্লিবাসী। ফলে এই চারজন আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ভোট দিতে পারবেন না।
বদলের বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই হাসিনার দল আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশ নিতে পারবে না দল। নিষিদ্ধ ছাত্র লিগও। সংগঠনের নেতা, কর্মীদের একে একে গ্রেপ্তারি, তাঁদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। ইউনুস সরকারের এহেন কার্যকলাপ দেখে প্রশ্ন উঠছে, যে হাসিনাকে 'স্বৈরাচারী' তকমা দিয়ে গদিচ্যুত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এত আন্দোলন করল ছাত্রসমাজ, তা কি আদৌ সাফল্যের মুখ দেখবে? নাকি গণতন্ত্রের নামে ফের আরেক 'স্বৈরতন্ত্র'ই জন্ম নেবে বাংলাদেশে?
