সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নানা ইস্যুতে দু'দেশের সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশের বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল দিল্লি। অর্থাৎ ভারতের মাটি ব্যবহার করে আর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না ঢাকা। এবার ভারতের থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতো আমদানি বন্ধ করল বাংলাদেশ। অনেকেই বলছেন দিল্লিকে পালটা এহেন পদক্ষেপ করেছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার।

প্রথম আলো সূত্রে খবর, বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করেছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আজ মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হল। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। ওই সব স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকে সুতো আমদানি হত।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতো আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাক তৈরি দেশে তৈরি সুতোর ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতো আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতো কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতো আমদানির সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এই আদেশ জারি করেন। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনও পথে সুতো আমদানি করা যাবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ভারতের মাটি ব্যবহার করে যাতে ঢাকা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারে, তার জন্য নানা সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। চুক্তি মতোই ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ (LCS), বন্দর, বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হত। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস’ (CBIC) বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ‘২০২০ সালের ২৯ জুনের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হল। এখন থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে। অর্থাৎ অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি করতে আর শুল্কবিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ভারতের বন্দর, বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। সীমান্ত পেরিয়ে কন্টেনার, ট্রাক আর প্রবেশ করতে পারবে না।’এই সিদ্ধান্তের ফলে যে নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য জোর ধাক্কা খেতে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
কয়েকদিন আগে চিন সফরে গিয়ে ইউনুসকে বলতে শোনা যায়, “ভারতের পূর্ব প্রান্তের সাতটি রাজ্য, যাদের সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। ওই বিরাট অঞ্চল কিন্তু পাহাড় আর স্থলভাগে ঘেরা। সমুদ্রপথে যোগাযোগ করার উপায়ই নেই তাদের। বাংলাদেশই হল সমুদ্রপথের রাজা। তাই ওই এলাকায় চিনা অর্থনীতির বিস্তার ঘটতেই পারে।” এই মন্তব্যের ইঙ্গিত অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ভারতের ৭ রাজ্য (সেভেন সিস্টার)কে ভেঙে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এই একই ইচ্ছা চিনের। যদিও সেই চৈনিক চাল বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এবার বাংলাদেশের মুখে এমন মন্তব্যে দুয়ে দুয়ে চার করতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না ভারতের। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের কফিনের অন্যতম পেরেক ইউনুসের এই মন্তব্য। তাই ব্যবসার রাস্তা বন্ধ করে ঢাকাকে বার্তা দিয়েছিল দিল্লি। তাই পালটা পদক্ষেপ করেছে ইউনুস সরকার।