shono
Advertisement
Bangladesh Situation

বিমানবন্দর থেকে খালি পায়ে বেরিয়ে দেশের মাটি স্পর্শ, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন 'ডার্ক প্রিন্স' তারেক?

আলিঙ্গনে তারেককে বরণ করলেন বিএনপি-র শীর্ষ নেতারা।
Published By: Saurav NandiPosted: 12:56 PM Dec 25, 2025Updated: 01:36 PM Dec 25, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তথা বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভোটের মুখে, প্রবল রাজনৈতিক টানাপড়েনের আবহে 'ডার্ক প্রিন্স' তারেকের এই ফিরে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত বিএনপি শিবির। বৃহস্পতিবার বেলার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পরেই দলের শীর্ষ নেতারা আলিঙ্গনে বরণ করেন তাঁকে। পরে বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময় জুতো খুলে খালি পায়ে দেশের মাটি স্পর্শ করলেন খালেদা-পুত্র। সেই সময় কিছুটা মাটি হাতেও তুলে নেন তিনি। কিন্তু তারেককে ঘিরে এত উন্মাদনার মধ্যেও সব মহলে এখন একটাই প্রশ্ন, বাংলাদেশকে কি তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন?

Advertisement

এমন একটা সময়ে বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,যখন তাঁর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। ভোট ময়দানে নেই শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ। সেই সুযোগে জমি দখলে তৎপর জামাতের মতো কট্টরপন্থী দল। গত বছর হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রাথমিক ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, এ বার বিএনপি-র ক্ষমতায় ফেরা সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের জমানায় গত এক বছরে জামাতের সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, এখন সমানে সমানে টক্করের এই জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে জামাত এবং বিএনপি। এই পরিস্থিতিতে তারেকের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, বিএনপি-কে উজ্জীবিত করা এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা। অনেকে মত, ব্রিটেন থেকেই তা শুরু করে দিয়েছেন খালেদা-পুত্র।

কয়েক দিন আগেই ব্রিটেনের এক সভায় তারেক যে ভাবে বার বার মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিকে নিশানা করেছেন, তা থেকেই তাঁর রাজনৈতিক অভিমুখ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে খালেদা-পুত্র এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন। এক, দেশের বিরাট সংখ্যক স্বাধীনতার সমর্থক মানুষকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা। দুই, ভারতকে বার্তা দেওয়া। তারেক বলেছিলেন, ‘‘১৯৭১ সালে যারাষড়যন্ত্র করেছিল, ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে, ১৯৯৬ সালে এবংপরবর্তী সময়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারাই আজও সক্রিয়।’’ কূটনীতিকেরা মনে করছেন, তারেকের বার্তা স্পষ্ট, দেশ-বিরোধী,মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী কোনও শক্তির সঙ্গে আপস নয়। অর্থাৎ অতীতে জামাতের সঙ্গে বিএনপি জোট করলেও এ যাত্রা তার কোনও সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘বিএনপির পরিচিতি জিয়া-উর রহমানের দল হিসেবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির সেনানি। তাই বিএনপি-র সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যোগ টেনে দেশের মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধের বিরাট সংখ্যক সমর্থককে কাছে টানতে চান তারেক। ময়দানে আওয়ামি লিগ নেই, তাই জামাতের মোকাবিলা করার একমাত্র শক্তি হিসেবে বিএনপি-কে তুলে ধরতে চাইছেন খালেদা-পুত্র।’’ সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারও বেড়েছে। প্রকাশ্যে দীপু দাসকে খুনের পর কোণঠাসা সংখ্যালঘুরা। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের উদ্দেশে তারেক কী বার্তা দেন, নজর রয়েছে সে দিকেও। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের এ-ও মত, নয়াদিল্লির সমর্থনও অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন তারেক। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে চুক্তিগুলি রয়েছে, তাতে কোনও প্রভাব পড়বে না এবং বাংলাদেশের মাটিকে কোনও ভাবে ভারত-বিরোধী কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, এই মর্মে তিনি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। হাসিনার অনুপস্থিতিতে ঢাকাকে পাশে পেতে বিএনপি ছাড়া আর কোনও বিকল্পও নেই নয়াদিল্লির কাছে। তারেকের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে পারে বিএনপি।

তবে পাল্টা অভিমতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সব কিছু এতটাও সহজ হবে না তারেকের পক্ষে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাও অনেকটাই বদলে গিয়েছে। 'মাটি' বুঝতেই অনেকটাই সময় ব্যয় করতে হবে তারেককে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে জামাত বাংলাদেশে যে আবহাওয়া তৈরি করে রেখেছে, তার মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ বিপরীত এবং সর্বজনগ্রাহ্য অবস্থান নিতে হবে তাঁকে। যা একেবারে ভোটের মুখে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে বিএনপি-র অন্দরেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। তা ছাড়া নিচুস্তরে তারেকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

কেউ কেউ মনে করছেন, তারেকের ফেরা বিএনপি নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে যে উন্মাদনা এবং জনসমর্থন দেখা গিয়েছে ঢাকার রাস্তায়, তা সাময়িক। এবং স্বাভাবিকও। কিন্তু তারেকের আগমন সত্যিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে কি না, তা বোঝা যাবে কয়েক দিন পর থেকে। এর সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, জামাতও চুপ করে থাকবে না। এখন দেখার, রাজনীতির এই জল কোন দিকে গড়ায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তথা বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
  • ভোটের মুখে, প্রবল রাজনৈতিক টানাপড়েনের আবহে 'ডার্ক প্রিন্স' তারেকের এই ফিরে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত বিএনপি শিবির।
  • বৃহস্পতিবার বেলার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পরেই দলের শীর্ষ নেতারা আলিঙ্গনে বরণ করেন তাঁকে।
Advertisement