সুকুমার সরকার, ঢাকা: এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও বাংলাদেশে ডিমের দাম লাগামছাড়া। ডিম কিনতে হাত পুড়ছে আম জনতার। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। দামে হ্রাস টানতে ভারত থেকে কয়েক দফায় ডিম আমদানি করা হলেও তেমন কোনও সুরাহা হয়নি। দাম কমানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম কিনতে না পারা, ঠিকমতো রশিদ না দেওয়া, আদালতের জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছে বেশ কিছু আড়তদার।
এনিয়ে সোমবার চট্টগ্রাম ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কর লিটন জানান, "গতকাল আমাদের ডিম কিনতে হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়। সরকার নির্ধারিত দাম ১১ টাকা ০১ পয়সা। এছাড়া যাদের কাছ থেকে ডিম কিনছি তারা রশিদ দিচ্ছে না। হয়রানি থেকে বাঁচতে আজ থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি। সরকারি দামে কিনতে পারলে তখন আড়তে ডিম বেচব। বকশির হাটে সাদা ডিম ডজন ১৬৫ টাকা, বাদামি ডিম ১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।"
ভারতে প্রতি পিস ডিমের দাম বাংলাদেশের টাকায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। সারাবছরই ভারতে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয় সাড়ে ৫ কিংবা ৬ টাকায়। দেশটি বন্যা ও প্রবল বৃষ্টির কবলে পড়লেও ডিমের দাম বাড়ায়নি সরকার। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রতিটি ডিম কিনতে হয়েছে ১০ টাকার বেশি দামে। এখন সেই ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দ্বিগুণ দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। এখানেই ক্রেতাদের প্রশ্ন, পড়শি দেশে ডিম কম দামে বিক্রি হলে বাংলাদেশে এত বেশি কেন?
এদিকে, এমন সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যখন নিত্যপণ্যের বাজারে মাছ, সবজি থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুর দাম চড়া। ক্ষুদ্র খামারিরা বলছেন, ডিমের চাহিদা বাড়লেও এই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যায় পোল্ট্রি খামার ক্ষতির মুখে পড়ে দৈনিক প্রায় ৫০ লক্ষ ডিমের উৎপাদন কমে যায়। যার জেরে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বাধ্য হয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিটি ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা বেঁধে দেয়। কিন্তু তাতেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না এসে উলটে দাম আরও বাড়তে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের প্রতি ডজন (১২টি) ডিমের জন্য দোকানভেদে এখনও গুণতে হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এনিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, নতুন সরকারের প্রথম দুই সপ্তাহে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাজারে কোনও পদক্ষেপ না থাকায় দাম বাড়তে থাকে। ডিম এখন নাগালের বাইরে।