জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: এসআইআর নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় ইতিমধ্যে বহু মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাম বাদ পড়েছে। যা নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায় তাঁরা। এর মধ্যেই বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের মতুয়াদের নাম বাদ যাওয়া নিয়ে মন্তব্যে ক্ষোভে ফুঁসছে মতুয়া সমাজ। এই প্রেক্ষাপটে মতুয়াদের পাশে দাঁড়াতে ঠাকুরনগর যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আগামী ৯ জানুয়ারি তিনি ঠাকুর বাড়িতে যাবেন এবং হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেবেন। যদিও পুজো দিতে দেওয়া হবে না বলে পালটা হুঁশিয়ারি শান্তনু ঠাকুরের। যা নিয়ে সরগরম ঠাকুরবাড়ি।
আজ মঙ্গলবার দলীয় কর্মীদের নিয়ে তারই প্রস্তুতি সভা ছিল বনগাঁয় ৷ সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ''আগামী ৯ জানুয়ারি আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে তাহেরপুরে সভা করবেন। এরপর আসবেন ঠাকুরনগরে। ঠাকুরবাড়িতে হরিচাঁদ হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেবেন। তারপরে সেখান থেকে সরাসরি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন৷'' তৃণমূল সভাপতির কথায়, ''দুপুর দু'টোর সময় তিনি ঠাকুরবাড়িতে যাবেন৷''
অন্যদিকে অভিষেকের আসার বিষয় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ৷ তিনি বলেন, ''অভিষেক যদি গায়ের জোরে অনেক ফোর্স নিয়ে জোরপূর্বক এখানে আসেন, তাহলে তাঁকে পুজো দিতে দেওয়া হবে না মতুয়ারা মিছিল করে ধিক্কার জানাবেন।'' বিজেপি নেতার কথায়, ''আগে তাঁর পিসি হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে নিয়ে যে বিকৃত মন্তব্য করেছিলেন তার জন্য ক্ষমা চাক, তারপর উনি পুজো দিতে আসুক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতুয়াদের পাশে থাকার দরকার নেই।''
প্রসঙ্গত গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে নব জোয়ার কর্মসূচিতে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই সময় তাঁকে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর অনুগামীরা। যা নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে ব্যাপক অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত পর্যন্ত হন। শেষপর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বড় মন্দিরে পুজো না দিয়ে ছোট মন্দিরে পুজো দেন। শুধু তাই নয়, বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘরে যান এবং মূর্তিতে প্রণাম করেই ফিরে যান।
যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকটাই বদল এসেছে! দিন কয়েক আগে এসআইআরের মাধ্যমে মতুয়াদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর৷ যা নিয়ে মতুয়া উদ্বাস্তুদের মধ্যে ভয়-ভীতির সঞ্চার হয়েছে। বক্তব্যের প্রতিবাদে দিন কয়েক আগে মতুয়া গোঁসাই পাগলরা শান্তনুর বাড়ির সামনে জবাব চাইতে গেলে শান্তনুর অনুগামীদের হাতে মারধর খেয়ে আহত হন৷ তারপর থেকেই ঠাকুরবাড়িতে চাপা উত্তেজনা রয়েছে৷
মতুয়া ভক্তদের কথায়, বিজেপি উদ্বাস্তু মতুয়াদের সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেবে বলেছিল৷ ২০১৯ সাল থেকে বনগাঁ লোকসভা মহকুমার চারটি বিধানসভায় মতুয়ারা উজাড় করে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল ৷ কিন্তু এতগুলো বছর কেটে গেলেও হাতে গোনা কয়েকজন নাগরিকত্ব পেয়েছে৷ বহু উদ্বাস্তু মতুয়ারা সিএএ তে আবেদন করলেও এখনো শুনানিতে ডাক পাননি। তাদের অনেকেরই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই৷ বিজেপি উদ্বাস্তু মতুয়াদের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার চক্রান্ত করেছে হলে দাবি করেছেন ক্ষোভ জানাচ্ছেন একাধিক মতুয়া ভক্ত৷
শুধু তাই নয়, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দাবিতে মতুয়া ভক্তরা ঠাকুরবাড়িতে অনশন করেছিলেন৷ সে সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে ঠাকুরবাড়িতে পাঠিয়েছিলেন অনশন মঞ্চে৷ তাঁরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শুনিয়েছিলেন৷ এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁয় গিয়ে সভা করেন। শুধু তাই নয়, চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগর পর্যন্ত পদযাত্রা করে মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন ৷ ঠিক এক মাসের ব্যবধানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরবাড়িতে যাওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
