সুকুমার সরকার, ঢাকা: রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত 'শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির'। যার বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। প্রত্যেক বছর দুর্গা ও কালীপুজোয় প্রচুর মানুষ আসেন এই মন্দিরে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভক্ত সমাগম ঘটে শ্যামার আরাধনায়। উৎসবের উন্মদনা বেশি দেখা যায় এই সময়। দেবীর উদ্দেশ্যে অনেক পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। প্রাচীন এই মন্দিরই এখন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ঢাকার "সিদ্ধেশ্বরী লেন' অবস্থিত বিখ্যাত এই কালীমন্দির। এলাকার নামকরণ হয়েছে মন্দিরের নামেই। কথিত আছে, বিক্রমপুরের (বর্তমান নাম মুন্সিগঞ্জ) তৎকালিন জমিদার চাঁদ রায় আনুমানিক ১৫৮০ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে এক সময় নরবলি হত। পরে ব্রিটিশ সরকার আইন করে সেই রীতি বন্ধ করে দেয়। বাংলার আধ্যাত্মিক জগতের অন্যতম নাম আনন্দময়ী মা ১৯২৬ সালে এখানে এসে ধর্মকর্মে আত্মনিয়োগ করার পর থেকে ভক্তদের মধ্যে এই মন্দিরের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
একসময় বিশাল পুকুর এবং অরণ্যঘেরা ছিল এই মন্দির। কিন্তু কালের নিয়মে নগরায়নের চাপ ও দখলদারিত্বের মধ্যে পড়ে আজ তা অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত মন্দিরের প্রবেশপথটিও নিতান্তই অপ্রশস্ত। কিন্তু উৎসব আবহে সেজে উঠেছে মন্দির প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি দিয়ে সাজানো মূল প্রবেশপথ দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে প্রশস্ত নাটমন্দির। আর এর পাশেই রয়েছে প্রাচীন মূল মন্দির। গঠনশৈলীর দিক থেকে অত্যন্ত ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি এখন নবরূপে সজ্জিত। ছোট্ট জানালা পেরিয়ে স্বল্পপরিসর গর্ভগৃহে বিশেষ শৈলীর বেদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত মা সিদ্ধেশ্বরীর। পাশের একটি মন্দিরেই রয়েছে শিবলিঙ্গ।
বিখ্যাত এই সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে সারাবছর বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। দিপান্বিতা অমাবস্যার রাতে উদযাপিত শ্যামাপুজো এবং শারদীয়া দুর্গাপুজো এই মন্দিরের প্রধান বার্ষিক উৎসব। তবে নাটমন্দির সংলগ্ন স্থায়ী মণ্ডপে জগদ্ধাত্রী পুজো, জন্মাষ্টমী ও শোভাযাত্রা, সরস্বতী পুজো, মহাশিবরাত্রি, বাসন্তী পুজো, গণেশ পুজো, শনি পুজো, লোকনাথবাবার পুজো-সহ আরও বিভিন্ন উৎসব উদযাপিত হয়। এছাড়াও বিবাহ, মুখেভাত, শ্রাদ্ধ, দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ এবং নানারকম ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন ধর্মসভা, আলোচনাসভা, সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান, তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞানুষ্ঠান, ৩২-প্রহরব্যাপী নাম-সংকির্তন ও নামগান অনুষ্ঠান এবং মহাপ্রসাদ বিতরণও বছরের বিভিন্ন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে নিঃখরচায় একটি গীতাশিক্ষা স্কুল রয়েছে। ঢাকা যেকোনও স্থান থেকে সহজেই এই মন্দিরে আসা যায়।