সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ তুঙ্গে। পাশাপাশি হিন্দু নির্যাতন, অনুপ্রবেশ এরকম একাধিক বিষয়ে দুদেশের সম্পর্কে ফাটল বাড়ছে। আর এই ঘোলা জলেই মাছ ধরতে নেমে পড়েছে পাকিস্তান! হাসিনাহীন বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও মজবুত করতে তৎপর তারা। ভারতের পড়শি দেশে প্রভাব বিস্তার করতে এবার ঢাকায় আসছে ইসলামাবাদের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাত্তরের গণহত্যা ভুলে গিয়েছে 'নতুন' বাংলাদেশ। ভারত বিদ্বেষের জিগির তুলে পাকিস্তানকে আরও কাছে টানছে ইউনুস সরকার।
বাংলাদেশকে হাতিয়ার করে ভারতকে অশান্ত করার ছক পাকিস্তানের বহুদিনের। হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর গদি হারিয়ে দেশত্যাগের পর যেন সাপের পাঁচ পা দেখছে তারা। এখন মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে পাক জাহাজ। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে মার খাচ্ছেন হিন্দুরা। কিন্তু পাক নাগরিকদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে ইউনুস সরকার। এবার ব্যবসার ক্ষেত্রেও পাক ব্যবসায়ীদের জন্যও বাংলাদেশের বাজার খুলছে ঢাকা। জানা গিয়েছে, পাকিস্তান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) ২৪ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁরা ঢাকায় থাকবেন।
সূত্রের খবর, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে উচ্চ পর্যায়ের এই বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা। এতে নেতৃত্ব দেবেন এফপিসিসিআইয়ের সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ এবং সিনিয়র সহসভাপতি সাকিব ফায়াজ মাগুন। এই প্রতিনিধিদলে পাকিস্তানের বিভিন্ন খাতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা থাকবেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আগে থেকেই রয়েছে। পাক ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর দুদেশের বাণিজ্য সংস্থার মধ্যে মউ স্বাক্ষর হতে পারে বলে খবর। বিশেষ করে চাল আমদানি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানা গিয়েছে। পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশহাক দারের বাংলাদেশ সফরের কথা জানা গিয়েছিল। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকায় পা রাখবেন তিনি। এনিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ইশহাক দার বলেন, "বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই। ঢাকাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে পাকিস্তান প্রস্তুত। আমাদের বিদেশ দপ্তর অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণ করছে। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে আমরা পাশে থাকতে চাই।” ইউনুস সরকারের আমন্ত্রণে তাঁর আসন্ন এই সফরকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেছে পাক বিদেশমন্ত্রক। প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রসংঘে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেই বৈঠকের পরও ঘোষণা করা হয় যে দুই দেশই বিভিন্ন স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশে অবাধ বিচরণ বাড়বে পাকিস্তানিদের। ইউনুস সরকার আসার পর পাক পণ্য লাল তালিকামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যবসার আড়ালে নানা হাতিয়ার, মাদক, জাল নোটের আদানপ্রদান হতে পারে আশঙ্কা। এছাড়া হাসিনা সরে যাওয়ার পর মাথাচারা দিয়েছে পাকপন্থী জামাত। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বাড়িয়ে তুলেছে আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)। যাদের যোগাযোগ রয়েছে বিভিন্ন পাক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে। আর এবিটিই এখন ভারতকে রক্তাক্ত করার ছক কষছে। ফলে যেভাবে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে তাতে আগামী দিনে ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়বে।