সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুজিবের সংবিধান 'কবর' দেওয়া থেকে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, এরকম একাধিক দাবি ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’তৈরি করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। কিন্তু বিতর্ক এড়াতে এতে সায় দেয়নি মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। পরে জানানো, সমস্ত কিছু বিচার করে সরকার ঘোষণাপত্র দেবে। কিন্তু ছাত্রনেতাদের অভিযোগ, এখনও এনিয়ে কিছু করা হচ্ছে না। তাই ডেডলাইনে বেঁধে দিয়ে বড় পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এবার কী বলছে ইউনুস সরকার?
গতকাল শনিবার হাসিনা সরকার হটাও আন্দোলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’র দাবিতে দেশব্যাপী যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "ঘোষণাপত্র প্রকাশ নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা জানতে আগামী ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি সারাদেশে যৌথভাবে জনসংযোগ করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু জানিয়েছে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। তাই আমরা গত ৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছি। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে সরকারের কোনও কার্যক্রম আমরা দেখিনি। তাই আমরা দাবি করছি, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। সরকার অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী গণসংযোগ চলবে।"
এই সময়সীমা দেওয়ার পরই নড়েচরে বসেছে সরকার। আজ রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, "জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে এবং এটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা নিয়ে সামনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কথাবার্তা হবে। সে আলোকেই খসড়া হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কবে আলোচনা হবে, সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি।" এরপর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে কি না? জবাবে আগের উত্তরের কথাই মনে করিয়ে দেন শফিকুল আলম।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, "জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ১৯৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। পাশাপাশি এই ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামি লিগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে। আমরা চাই বাহাত্তরের সংবিধান, মুজিববাদী চেতনা ও আওয়ামি লিগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের দাঁড়ানোকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমরা চাই মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করুক সরকার।" এরপরই তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা ওদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এর সঙ্গে সরকারের বিন্দুমাত্র কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁরা ছাত্রদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন, তাঁরা একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগকে সমর্থন করছেন।” বিশ্লেষকদের মতে, এখন এই ঘোষণাপত্র নিয়েই ইউনুস সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ বাড়ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। যাঁদের আন্দোলনেই গদিচ্যুত হন হাসিনা। ক্ষমতায় আসেন ইউনুস।