সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জুড়ল আরেকটি পালক। শনিবার বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে অসমের নুমালিগড় থেকে জ্বালানি তেল এল পার্বতীপুরে। তবে গত বৃহস্পতিবারই পার্বতীপুর ডিপোতে সফলভাবে ডিজেল আসা শুরু হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে ভারচুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে জ্বালানি তেল আমদানি-রপ্তানির উদ্বোধন করেন। অসমের নুমালিগড় রিফাইনারির শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর হয়ে পার্বতীপুর ডিপোতে সংযুক্ত হয়েছে পাইপটি।
বাংলাদেশে উত্তরের ১৬ জেলায় নিরবিচ্ছন্নভাবে ডিজেল সরবরাহ ও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র-সহ এই অঞ্চলের অন্যান্য ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল (ডিজেল) আমদানির রিসিভ টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। অসমের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত এবং ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইনের সঙ্গে শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ভারতে ৫ কিলোমিটার ও বাংলাদেশে ১২৫ কিলোমিটার। ব্যয় হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভারত সরকার ৩০৩ কোটি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ২১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপ দিয়ে বছরে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহণ করা সম্ভব হবে।
[আরও পড়ুন: ‘ক্রমশ প্রকাশ্য’, সৌমিত্রর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের মাঝে নতুন সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন সুজাতা]
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির পাশাপাশি চলছে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়াও। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির ফলে একদিকে সাশ্রয় হবে সময়। অন্যদিকে কমবে জ্বালানি পরিবহণ ব্যয়ও। বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানিয়েছেন, প্রথমদিকে ১০০০ টন করে ডিজেল আমদানি করা হলেও ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো হবে। পার্বতীপুর ডিপোর সক্ষমতা রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন।
বিপিসি সূত্রে খবর, বর্তমানে দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭২ লক্ষ মেট্রিক টন। তার মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮ থেকে ৪৯ লক্ষ মেট্রিক টন। যার ৮০% সরকার আমদানি করে। বর্তমানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে। আর পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব এমিরেটস, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে কম খরচে নতুন উৎস থেকে ডিজেল আমদানির পথ খুঁজছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে রাশিয়া ও ব্রুনেইর সঙ্গেও আলোচনা করছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে (১৫৯ লিটার) জাহাজ ভাড়া-সহ অন্য খরচ দিতে হয় গড়ে ১০ ডলার। ভারত থেকে আমদানির ফলে এটি ৮ ডলার হতে পারে। প্রতি ব্যারেলে দু’ডলার সাশ্রয় করা গেলে এক লক্ষ টনে সাশ্রয় করা সম্ভব প্রায় ১৫ লক্ষ ডলার। তার সুবিধা ভোগ করবেন উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ।