নির্মল ধর: না, এঁর নাম আগে এপার বাংলায় কখনও শুনিনি। হুমায়ূন আহমেদ, তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম, মোস্তাফা সরওয়ার ফারুকী, কাজী হায়াৎ বা এনামুল করিম নির্ঝরদের নাম ও ছবির সঙ্গে পরিচয় ছিল। এই প্রথম মাত্র এক মাস আগে কলকাতায় বাংলাদেশী ফিল্ম উৎসবে প্রায় সুনামি ঝড় তুলে উপস্থিত হলেন মেজবাউর রেহমান সুমন। ছবির নাম “হাওয়া”! উৎসবের পাঁচদিন অন্তত চারবার দেখাতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। তবুও “হাওয়া” দেখার ভীড় কমেনি। সম্ভবত সেই সাফল্যের ফসল ঘরে তুলতেই এই শহরে মুক্তি পেলো “হাওয়া”!
হ্যাঁ, এটা কখনও অস্বীকার করা যাবে না, কোনও বাংলাদেশি ছবি এমন ঝড় তুলতে পারেনি কলকাতায়। এমনকী, সত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তৈরি জহির রায়হানের বিখ্যাত ছবি “জীবন থেকে নেওয়া” ও এমন জনপ্রিয় হয়নি। পরিচালক মেজবাউর তাঁর গল্পের সঙ্গে এক লোককাহিনীকে এমন সুন্দর ভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন যে দর্শক প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় আসনের হাতল ধরে উৎকন্ঠিত হৃদয়ে বসে থাকেন “কী হয় কী হয়” ভাবনা নিয়ে। ফারুক আমিন এবং সুকমো ধীমানের চিত্রনাট্যের ঠাস বুননকে পরিচালক চিত্রায়নও করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আর তাঁর হতে তুরুপের তাসটি ছিল দুই সিনেম্যাটোগ্রাফার কামাল হোসেন খান ও তনভির আহমেদ শোভন। গভীর সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরার অ্যাডভেঞ্চার এই ছবির ইউএসপি। দর্শক চোখ ভরে শুধু ক্যানভাস দেখেই চমকে যাচ্ছেন। ছবির গল্প না হয় বাদ থাক।
[আরও পড়ুন: Film Review: কাজলের অভিনয়ই তুরুপের তাস, মন ভার করা ছবি ‘সালাম ভেঙ্কি’]
তবে শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি – প্রায় জনাসাতেক পুরুষ নিয়ে মাঝ বয়সী চান (চাঁদ) মাঝি, মাছ ধরতে গেছেন মাঝ দরিয়ায়। জালে হঠাৎই উঠে পড়লো বিশাল চেহারার সুমো মাছের আড়ালে এক সুন্দরী তরুণী। কিন্তু জেলের নৌকায় নারী বিবর্জিতা যে! এরপর যা যা ঘটে সেটা অনুক্তই থাক। এই ছবির ঝোড়ো জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ, এত বড় ক্যানভাসে বাংলাদেশের ছবি আগে হয়নি, এবং প্রায় প্রতিটি কারিগরি বিভাগের কাজে নিপুণ পেশাদারি ছাপ স্পষ্ট।
আর একটি কারণ হল – ছবির প্রত্যেক শিল্পীর একেবারে মাটির(এখানে জলের) কাছাকাছি পৌঁছে অভিনয় পরিবেশন! প্রধাণ চরিত্র চান মাঝির ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরী(ইনি ছবির অন্যতম প্রযোজকও) অভিনয় ছবিতে অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
চরিত্রের অন্তর তিনি উপলব্ধি করেই কাজটি এমন সুসম্পন্ন করতে পেরেছেন! তাঁর কথার একান্ত নিজস্ব টানের সঙ্গে সাইফুল রাজ, সুমন আনোয়ার এবং প্রায় নীরব থেকেও নাফিজা তুশি দারুন এক সম্মিলিত প্রয়াসের অংশীদার হয়েছেন। সুমন চৌধুরীর সুরে ” তুমি বন্ধু কালাপানি” গানটির সঙ্গে যুথবদ্ধ নাচটি ব্যবসায়িক হয়েও পরিবেশ ও পরিমণ্ডলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এই ছবির পর থেকে বাংলাদেশের সিনেমায় পরিচালক মেজবাউরের নাম শুধু বাণিজ্যিক ধারা নয়, অন্যধারার সিনেমার সঙ্গেও উচ্চারিত হবে আশা রাখি। তবে ক’দিন আগে শ্রীলঙ্কার অরুণা জয়া ওয়ার্দানের “ওশেন এঞ্জেল” নামে একটি ছবি দেখলাম। তার সঙ্গে গল্পের অনেকটাই মিল। এমনকী, চিত্রায়নেও। জানিনা, এটা কাকতালীয়!