দেবব্রত দাস, খাতড়া: আরোহীর প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতার সাইকেল। সেই উঁচু সাইকেল চালিয়ে রাস্তায় চলেছেন এক যুবক। স্বাভাবিক নয় যা, তাই তো নজর কাড়ে সকলের। উঁচু সাইকেলও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই তো ওই সাইকেল নিয়ে বেরলেই হাঁ করে আরোহীর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন পথচারীরা। যা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন আরোহী। বাঁকুড়ার সিমলাপালের পার্শ্বলা গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল কর্মকারের হাতে তৈরি এই অভিনব সাইকেলই এখন নেটদুনিয়ায় ভাইরাল।
সিমলাপালের পার্শ্বলা গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল খাতড়া আদিবাসী কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একই সঙ্গে বিনপুর ২ নম্বর সরকারি আইটিআই কলেজের ছাত্র। বাবা শিবপ্রসাদ কর্মকার পেশায় কামারশালের কারিগর। মা কাঞ্চন কর্মকার গৃহবধূ। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সকলের ছোট চঞ্চল। বছর কুড়ির চঞ্চল বর্তমানে বিনপুর আইটিআই কলেজে মেকানিক্যাল মোটর ভেহিকেলস ট্রেড নিয়ে পড়াশোনা করছেন। কলেজ বন্ধ থাকাকালীন বাড়িতেই তিনি তৈরি করেছেন প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতাবিশিষ্ট অভিনব এই সাইকেল।
কীভাবে তৈরি করেছেন এই সাইকেল? চঞ্চলের কথায়, “বাড়িতে থাকাকালীন একদিন মাথায় এসেছিল একটা উঁচু সাইকেল বানানোর। সেই মতো আমার বাড়ির পুরাতন সাইকেল নিয়ে তার উপরে সাইকেলের আরও একটা বো জুড়ে দেওয়ার কথা ভাবি। গ্রিল মিস্ত্রির কাছে সেই কাজ করাই। এরপর লোহার রড-সহ নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে সাইকেলটি আরও উঁচু করি। সাইকেলের চেন একটু বড় করে তৈরি করা হয়। স্বছন্দে চালানোর জন্য সাইকেলের ব্রেক, প্যাডেল, সিট সবই মানানসই তৈরি করি। এভাবেই পুরনো সাইকেল নয়া রূপ পায়। মাত্র ২ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করেই তৈরি হয়েছে সাইকেলটি। আমাকে এই কাজে সহযোগিতা করেছে আমার বন্ধু বুদ্ধদেব কর্মকার।”
[আরও পড়ুন: ১৫ মিনিটেই ভাগ্যবদল! লটারির টিকিট কেটে কোটি টাকা জিতলেন বর্ধমানের অ্যাম্বুল্যান্স চালক]
চঞ্চল আরও বলেন, “কয়েকদিন আগে এই সাইকেল চালিয়ে আমি বাড়ি থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরের বিনপুর কলেজে গিয়েছিলাম। সময় লেগেছিল পৌনে ৩ ঘন্টা। সাধারণ সাইকেলের থেকে এই উঁচু সাইকেলের গতিবেগ একটু বেশি। একবার সাইকেলে উঠে পড়লে চালিয়ে যেতে অসুবিধা হয় না। আমি সাইকেল তৈরি করার পরে গ্রামের রাস্তায় চালিয়ে পোক্ত হয়ে গিয়েছি। এখন কোন অসুবিধা হয় না।”
ছেলের আবিষ্কারের কথা এখন গ্রামের সকলের চর্চার বিষয়। যা বেশ ভালই লাগছে চঞ্চলের বাবা শিবপ্রসাদ কর্মকারের। তিনি বলেন, “চঞ্চল বরাবর একটু অভিনব কাজ করতে পছন্দ করে। বাড়িতে বসে বসেই ও এই সাইকেল তৈরি করেছে। অনেকেই এখন সাইকেল দেখার জন্য বাড়িতে আসছেন।”
বিনপুর আইটিআই কলেজের মেকানিক্যাল মোটর ভেহিকেলস বিভাগের শিক্ষক অয়ন নস্কর চঞ্চলের এই সাইকেলের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “নিজের বুদ্ধি দিয়ে এই অভিনব সাইকেল তৈরি করেছে চঞ্চল। সাইকেল শুধু তৈরি করেনি। যাতে সহজে চালাতে পারে তার ব্যবস্থাও করেছে।” চঞ্চল জানান, আগামীদিনে এই সাইকেল আরও উন্নতমানের এবং মোটরচালিত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।