সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিকে শোকের আবহ। তারমধ্যেই বদলার হুমকি।
“ছয় পুলিশকর্মীকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে, তাদের কোনওভাবে রেয়াত করা হবে না। যে জঙ্গি দল ওদের মারল সেই দলের অস্তিত্ব থাকবে না। পুরো দলকেই মুছে ফেলা হবে,” অনন্তনাগের আচাবলে হত্যালীলার একদিনের মধ্যেই টুইটারে এমন হুমকি দিলেন বারামুলার সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ ইমতিয়াজ হুসেন। শুক্রবার লস্কর জঙ্গিদের হামলায় তিনি হারিয়েছেন তাঁর অন্যতম প্রিয় সহকর্মী সাব ইন্সস্পেক্টর ফিরোজ আহমেদ দারকে।
হুসেনের মতোই বদলার সুর জম্মু–কাশ্মীরের ডিজিপি এস পি বৈদ্যর গলাতেও। স্পষ্ট জানিয়েছেন, লস্করের যে জঙ্গিরা অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। দ্রুত হামলাকারীদের ধরা হবে। আক্রমণকারীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলিও জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেন। বলেন, “কাশ্মীরে ছয় পুলিশকর্মীর উপর ‘কাপুরুষোচিতভাবে’ হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। নিহতদের পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানাচ্ছি। নিহত নিরাপত্তারক্ষীদের স্যালুট।”
শুধু হত্যা করা নয়, ছয় পুলিশকর্মীর দেহ জঙ্গিরা বিকৃতও করেছে। নিহত কনস্টেবল তসভির আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর ডিজিপি জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, টহলদারির সময় পুলিশের সঙ্গে কোনও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল না। সেই সুযোগেই নিরাপত্তারক্ষীদের খুব কাছ থেকে মুখ লক্ষ্য করে হঠাৎ গুলি চালায় জঙ্গিরা। তারপর এক পুলিশকর্মীর পা পর্যন্ত নৃশংসভাবে ছিঁড়ে নেয় জঙ্গিরা। পুলিশকর্মীদের অস্ত্র নিয়েও জঙ্গিরা পালিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেছেন বৈদ্য। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, লস্কর কমান্ডার বাসির লাশকারির নেতৃত্বে জঙ্গিরা হামলা চালায়। বাসির সম্পর্কে কোনও তথ্য জানাতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা ‘ইনাম’ দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন ডিজিপি। তাঁর আশা শীঘ্রই বাসিরকে পাকড়াও করা হবে।
পুলিশকর্মীদের উপর হামলার আগে কাশ্মীরের বিজবেহরা এলাকার আরওয়ানি গ্রামে পুলিশের গুলিতে খতম হয় লস্কর কম্যান্ডার জুনেইদ মাট্টু। প্রাথমিক অনুমান, ওই হামলার বদলা নিতেই জিপে আক্রমণ চালায় জঙ্গিরা। শনিবার, লস্কর কম্যান্ডার মাট্টু–সহ তিন জঙ্গির দেহ উদ্ধার করেছে সিআরপিএফ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে দু’টি একে ৪৭, ছ’টি ম্যাগাজিন। মাট্টু হত্যার প্রতিবাদে শনিবারও বনধ ডাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোটা জম্মু–কাশ্মীরে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। হুমকি ও থমথমে অবস্থার মধ্যে জম্মু–কাশ্মীরের অবন্তিপুরজুড়ে শোকের আবহ।
জঙ্গিদের গুলির নিহত সাব ইনস্পেক্টর ফিরোজ আহমেদ দারকে চোখের জলে বিদায় জানানো হয়। গ্রামের সকলেই শেষবারের মতো তাঁদের ‘ঘরের হিরো’–কে দেখতে হাজির হয়েছিলেন। শোকের মধ্যেই বেশ কয়েক বছর আগেকার ফেসবুকে ফিরোজের একটি পোস্ট রীতিমতো ‘ভাইরাল’ হয়েছে। তিনি লিখেছিলেন, “মনে কর সমাধিস্থলের পথে যাচ্ছ তুমি। তোমার পরিবারের সকলেই কাঁদছে। মনে কর তুমি রয়েছ সমাধিক্ষেত্রে। কালো অন্ধকারময় গর্তে একা। এক্কেবারে একা।” অনন্তনাগের ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, ফিরোজের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি।
The post ‘লস্করের জঙ্গি দলটাকেই মুছে দেব’, সহকর্মীর মৃত্যুতে শপথ পুলিশের appeared first on Sangbad Pratidin.