ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: ফের রীতি ভাঙল বিশ্বভারতী। দোলের দিন নয়, মঙ্গলবার বসন্ত উৎসব (Basanta Utsav) করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হোলির দিনে বসন্ত উৎসব হওয়ার দীর্ঘ দিনের রীতি ভাঙলেন তাঁরা। তবে বসন্ত উৎসবের সব রীতি মেনেই এই অনুষ্ঠান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গৌড় প্রাঙ্গন মঞ্চে এই অনুষ্ঠান চলছে। অনুষ্ঠানস্থলে ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী, কর্মী, অধ্যাপকের প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীরা।
বিশ্বভারতী ( Visvabharati University) সূত্রে জানা গিয়েছে, বসন্ত উৎসবের যে নিয়ম-নীতি রয়েছে তা মেনেই এবার অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। সোমবার রাত্রি ৯টায় এবং মঙ্গলবার ভোর ৫টায় ‘বৈতালিক’ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টায় বিশেষ ‘মন্দির’ও হয়। এর পর সকাল ৯টায় বসন্ত উৎসবের সূচনা। ‘খোল দ্বার খোল গানের’ সঙ্গে শোভাযাত্রায় যোগ দেন ছাত্রছাত্রীরা। রয়েছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ অন্যান্যরা। এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন সংগীত ভবনের ছাত্রছাত্রী এবং অধ্যাপকরা। সন্ধ্যা ৭টায় গৌড় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্য।
[আরও পড়ুন : জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে মদত ছিল মমতার! বিস্ফোরক অভিযোগ বিজেপি নেতার]
প্রসঙ্গত, শ্রীপঞ্চমীর বা বসন্তপঞ্চমীর দিন ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋতু উৎসবের সূচনা করেছিলেন। অনুষ্ঠান হয়েছিল প্রাককুটিরে, আজ যা শমীন্দ্র পাঠাগার। ধরে নেওয়া হয় ঋতু উৎসবের মধ্যে দিয়ে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয়েছিল। প্রথম দিকে আম্রকুঞ্জে বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হত। ভিড় বাড়লে তা সরিয়ে নিয়ে আসা হয় আশ্রম মাঠে। কিন্তু ১৯১৮ সালে বসন্ত উৎসবে ২ লক্ষের বেশি মানুষ ভিড় হয়েছিল। এর ফলে বসন্ত উৎসব শেষ হতেই বিশ্বভারতীর বিভিন্ন রাস্তা অররুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষ আটকে ছিল, পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তার পরেই কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় বসন্ত উৎসবের দিন পরিবর্তন করা হবে। পূর্ব ঘোষণা মতো দোলের দিন ভিড় এড়াতে এবার বসন্ত উৎসবের দিন পরিবর্তন করার পাশাপাশি আশ্রম মাঠ থেকে পুরো অনুষ্ঠান সরিয়ে নিয়ে আসা হল গৌড় প্রাঙ্গনে।
এদিকে বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আশ্রমিক থেকে প্রাক্তনীরা। ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “বিশ্বভারতীতে যা হচ্ছে তাতে আমরা আবাক হয়ে যাচ্ছি। আশ্রমের রীতিনীতি, সংস্কৃতি সব ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।” একই বক্তব্য প্রাক্তনী অশোক মুখোপাধ্যায়েরও। বলেন, “মেলা বন্ধ করেছেন এবার বসন্ত উৎসবও বন্ধ করে দেওয়া হল। গুরুদেবের সৃষ্টি এখন ধ্বংসের মুখে।”
এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর মুখপাত্র অনির্বাণ সরকার কিছু বলতে অস্বীকার করেন।