দেবব্রত মণ্ডল, বাসন্তী: ভোট অশান্তিতেই বন্দুকের গুলিতে উড়েছিল হাত। ঘরের তিন-তিনটি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণও হারিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি এখনও মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে পদ্মাদেবীর। বাসন্তীর আমঝাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তালদহ হালদার পাড়ার সেই ঘটনার কথা কে না জানেন। সেবার বেশ কয়েকজনের প্রাণ গিয়েছিল ওই পঞ্চায়েত ভোটে। বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপি এবং সিপিএমের মধ্যে লড়াইয়েই ঘটেছিল সেই ঘটনা। এখন অবশ্য সেসব অতীত।
আর সেই দিনও নেই। এই আমলে ভোটে আর সেই অশান্তি হয় না। ভোট এখন শান্তির। ভোট মানে এখন গণতন্ত্রের উৎসব। ভোট আসে, ভোট যায়। তালদহ গ্রামে আর কোনও অশান্তি নেই। এখন সবাই মিলে একসঙ্গে ভোটের উৎসব পালন করেন। তাই একহাত কাটা অবস্থাতেই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে অন্য হাত দিয়ে বোতাম টিপে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন গৃহবধূ পদ্মা হালদার।
[আরও পড়ুন: রিল বানিয়ে ভাইরাল হওয়ার নেশা, একশো ফুট উঁচু থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে কিশোরের মৃত্যু!]
ভোট দেওয়ার সময় মনে পড়ে পরিবারের মৃত সদস্যদের কথা। মন খারাপ হয়ে যায় মৃত কনক সর্দার, রাম হালদার ও ফনি হালদারের কথা মনে পড়লে। তখন ওঁরা সবাই আরএসপি করতেন। এখন গ্রামে আর বামেদের সেই আধিপত্য নেই। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই এখন তৃণমূল সমর্থক। এমনকী পদ্মদেবীর পরিবারও। আর তাই তো গত দুই পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর দেওয়া ভোটে জয়ী হয়ে পঞ্চায়েতে তৃণমূল সদস্য হয়েছেন তাঁর ছেলে অনুপ হালদার। এবার পঞ্চায়েত ভোটে ছেলের বদলে বউমা অনিন্দিতা হালদার দাঁড়িয়েছিল। বউমাও জয়ী হয়ে পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য হয়েছেন।
এবার আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মনস্থ করেছেন পদ্মাদেবী। এদিন তিনি বলেন, "অবশ্যই যাবো ভোট দিতে। কাটা হাত নিয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেব। কারণ এখন আর এখানে ভোটে আতঙ্ক নেই। ভোট এলে গোলা বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ গ্রামে পাওয়া যায় না। বোমাগুলির লড়াই চলে না। প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে না। সব ভোটেই গ্রামে শান্তি বিরাজ করে। আর তাই তো ভোট এখন আমার কাছে এক উৎসব।"