সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “বিবাহবার্ষিকী তো ফি বছরই কাটাই, তবে এবার এই কঠিন পরিস্থিতিতে মন সায় দিল না। চেয়েছিলাম, অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে। তাই আমফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনে চলে এলাম তাদের হাতে আমাদের কিছু সাহায্য তুলে দেওয়ার জন্য”, মন্তব্য বসিরহাটের শিক্ষিকা ডেসডিমনা মল্লিকের। পাশেই দাঁড়িয়ে তাঁর স্বামী সুবীর মল্লিকও। বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের টাকায় সুন্দরবনের দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেন বসিরহাটের এই শিক্ষক দম্পতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতে অনুপ্রাণিত হয়েই এমন মানবিক উদ্যোগে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন ।
বসিরহাট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের মুন্সেফপাড়ায় থাকেন শিক্ষিকা ডেসডিমনা মল্লিক ও স্বামী সুবীর মল্লিক। প্রতিবছরই ৭জুন ধুমধাম করে তাঁদের বিবাহবার্ষিকী পালিত হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডা, ভুরিভোজ এবং আনন্দের মধ্য দিয়েই তাঁদের জীবনের এই বিশেষ দিনটিকে উপভোগ করেন তাঁরা। কিংবা কখনও আবার দেশের অন্য কোনও প্রান্তেও ঘুরতে যান। কিন্তু এবার এই আনন্দ উদযাপনে মন সায় দেয়নি দম্পতির।
একদিকে লকডাউনে বেকারত্ব, উপরন্তু আমফান সাইক্লোনের দাপটে ঘর-বাড়ি, জমি খুইয়ে প্রান্তিক মানুষগুলো একেবারে নাজেহাল। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে কেউ পরিবার নিয়ে পথে বসেছেন, আবার কেউ বা ঠিকমতো খেতেও পাচ্ছেন না। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের লীলাখেলায় পড়াশোনাও শিকেয় উঠেছে স্কুল পড়ুয়াদের। বইপত্তর, খাতা, কোথায় কী..! সব ভেসে গিয়েছে। অসহায় মানুষগুলোর এই সঙ্গীন পরিস্থিতিই বসিরহাটের শিক্ষক দম্পতির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। তাই এবার বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের জন্য সঞ্চিত অর্থ দিয়েই মানবিক উদ্যোগে শামিল হলেন তাঁরা। পৌঁছে গেলেন সন্দেশখালি, শিতুলিয়া, হিঙ্গলগঞ্জ, ঘূণী, মিনাখাঁ ও মল্লিকঘেরির বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের জন্য গচ্ছিত অর্থতেই অবশ্য সবটা কুলোয়নি, তাই নিজেদের সঞ্চিত অর্থও এই কাজে লাগালেন দম্পতি।
[আরও পড়ুন: আসানসোলের কিশোর খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার বাবা, কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা]
চাল, ডাল, আলু, জলের বোতলের পাশাপাশি স্যানিটাইজার ও মাস্কও বিতরণ করলেন মল্লিক দম্পতি। পাশাপাশি যেসব স্কুলপড়ুয়ার বই নদীর জলে ভেসে গিয়েছে, তাদের হাতে খাতা, পেন ও বই তুলে দিয়েছেন। ত্রাণ বিতরণের জন্য কখনও পায়ে হেঁটে, আবার কখনও বা মোটর সাইকেল, কখনও চারচাকা ভাড়া করে পৌঁছে গিয়েছেন সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে। জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এই বিপর্যয়ের মধ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই এগিয়ে আসা।”
শিক্ষক দম্পতির পাশাপাশি দুর্গতদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন শুভেন্দু, নিতাই, ইন্দ্রদীপ, দিলীপ এবং পিন্টুরাও। যতদিন সাধ্য থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এভাবেই দুর্গতদের পাশে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: আমফানে জাল ছিঁড়েছে, সুন্দরবনে বাঘ আটকাতে ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে রাত জাগছেন বনরক্ষীরা]
The post মমতাই অনুপ্রেরণা, বিবাহবার্ষিকী ভুলে সুন্দরবনের দুর্গতদের পাশে বসিরহাটের শিক্ষক দম্পতি appeared first on Sangbad Pratidin.