ধীমান রায়, কাটোয়া: বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। অশক্ত শরীরটাকে কোনওরকমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভরসা একটি লাঠি। হাতে একটা তোবরানো আ্যলুমিনিয়ামের বাটি। লাঠিটি ধরে থাকা কাঁপা কাঁপা হাতে ঝুলছে একটি ছেঁড়া থলি। অসহায় বৃদ্ধার পেট চলে ভিক্ষা করেই। করোনা (Covid-19) মোকাবিলায় রবিবার থেকে রাজ্য জুড়ে জারি হয়েছে কার্যত লকডাউন। গ্রাম থেকে হেঁটে হেঁটেই ভাতার বাজারে আসতে মঙ্গলা বাস্কি নামে ভিক্ষাজীবী ওই বৃদ্ধার প্রায় সাড়ে নটা বেজে যায়। কয়েকটা দোকান ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখলেন একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক দোকান। বাজার থেকে মানুষজন ঘরমুখী। তারপরেই মুহূর্তের মধ্যে বাজার শুনশান। ফলে খালি হাতেই ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। তবে এটা শুধু ভাতারের চিত্র নয়, গোটা রাজ্যের একাধিক জায়গা থেকেই দেখা মিলছে এই চিত্রের।
এদিকে, ওই বৃদ্ধা মঙ্গলা বাস্কি জানতেন না রবিবার থেকেই আরও কড়াকড়িভাবে করোনা বিধিনিষেধ জারি হবে। তাই বাধ্য হয়ে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কেট কমপ্লেক্সের সামনের সিঁড়িতে বসেও পড়েন। রোদের তাপ বাড়ছে। ক্লান্ত শরীরে হতাশ হয়ে ভাবতে থাকেন। তার কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল মার্কেটের কোলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে দু’টি হাত কয়েকটা খুব নরম হয়ে যাওয়া কলা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বাড়িয়ে দিচ্ছে। জানা যায়, এক ফল বিক্রেতার নজরে পড়ার পর গোডাউন থেকে কয়েকটা কলা নিয়ে এসে ওই বৃদ্ধাকে দেন। আর প্রায় পচতে বসা কলাগুলি পেয়ে পরম যত্নে ব্যাগের মধ্যে ভরতে থাকেন মঙ্গলাদেবী। দু’বেলার খাবারের ব্যবস্থাটা হয়ে যাবে যে।
[আরও পড়ুন: গলার নলি কেটে মেয়েকে খুন! ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ বাবার, চাঞ্চল্য মুর্শিদাবাদে]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহের অন্যান্য দিন দু-চারজন ভিক্ষাজীবীদের বাজারে দোকানে দোকানে ঘুরতে দেখা গেলেও রবিবার হল ভিক্ষাজীবীদের ভাতার বাজারে ঘোরার দিন। অঘোষিত এই দিনটিতেই দোকানদাররা নিরাশ করবেন না এই আশা নিয়ে ভাতার বাজারের আশপাশের বহু গ্রাম থেকে অসহায় ভিক্ষাজীবীর দল ভিড় করেন। কিন্তু এদিন থেকে ফের বিধিনিষেধ শুরু হতে চলেছে তা ভিক্ষাজীবীদের অনেকেই জানতেন না। ফলে শুনশান বাজারে খালি হাতেই ফিরে যেতে হয় অসহায় ভিক্ষাজীবীদের। আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগেই। করোনা সংক্রমণে লাগাম টানার প্রচেষ্টায় বাধ্য হয়ে সরকারিভাবে রবিবার থেকে কার্যত লকডাউন শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষদের মধ্যেও এই পরিস্থিতিতে অনেকাংশে ফিরে এসেছে সচেতনতা। কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে সংকটে পড়েছেন তারাই। যাদের ভিক্ষার বাটি হাতে অনেকটা পথ ঘুরলে তবেই মেটাতে পারেন খিদের জ্বালা।