shono
Advertisement

Breaking News

আলো আর অন্ধকারের খেলায় শিল্পের ব্যতিক্রমী উদযাপন বেহালা আর্ট ফেস্ট-এ

এবারে 'বেহালা আর্ট ফেস্ট'-এর কেন্দ্রীয় ভাবনা 'আলো ও অন্ধকার'।
Posted: 08:47 PM Feb 26, 2022Updated: 08:47 PM Feb 26, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চার দেওয়ালের বাঁধা কোনও পরিসরই শিল্পের একমাত্র ঠিকানা নয়। তার নান্দনিক প্রকাশ আমাদের দৈনন্দিনে। মানুষের যাপনের খুঁটিনাটিতেই মিশে থাকে অযুত শিল্প-সম্ভাবনা। ঠিক এই ভাবনা থেকেই শিল্পকে উন্মুক্ত পরিসরে মানুষের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে-মিশিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছেন শহর কলকাতার শিল্পীরা। আর তাঁদের সেই আয়োজনের ফলশ্রুতি ‘বেহালা আর্ট ফেস্ট’ (Behala Art Fest)। ২০২২-এ তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে এই ব্যতিক্রমী উদযাপন। এবারের কেন্দ্রীয় ভাবনা ‘আলো ও অন্ধকার’।

Advertisement

ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

আলো আর অন্ধকারে ভিতরই খেলা করে আমাদের জীবন। চেনা সংজ্ঞা কিংবা অর্থের বদলও ঘটে সেখানে। আলো মাত্রই যে তা ভালর দিশারী, তা হয়তো সবক্ষেত্রে সত্যি নয়। আলোর মাত্রাতিরিক্ত ঔজ্জ্বল্য কখনও বিভ্রান্তও করতে পারে। আবার অন্ধকার মানেই যে তা খারাপ কিছুর দ্যোতক, তা-ও এক কথায় বলা যায় না। কেননা অন্ধকারের উৎস থেকে যে আলোর উৎসার তা হয়তো চিনিয়ে দিতে পারে আমাদের প্রকৃত সত্তাকে। আলো অন্ধকারের এই যে নানা খেলা, যা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে আমাদের জীবনে, তাই-ই শিল্পের মাধ্যমে ধরতে চেয়েছেন বিভিন্ন শিল্পী।

ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

আর এই ভাবনার প্রকাশ মিশে গিয়েছে জীবনযাপনের খুব চেনা অনুষঙ্গে। একটা ছাপোষা চায়ের দোকানই তাই এখানে হয়ে উঠেছে আশ্চর্য শিল্পসুন্দর। সাধারণ এক মানুষের উপার্জনের এই যে সামান্য সম্বলটুকু, তার সঙ্গে যখন সনাতন দিন্দার মতো খ্যাতনামা শিল্পী জুড়ে দিচ্ছেন বিখ্যাত ছবি ‘দ্য মিল্কমেড’-এর ভাবনা, তখন বোঝা যায়, আমাদের চেনা পৃথিবীও কতখানি বদলে যেতে পারে শিল্পের আঙিনায়। বেহালা আর্ট ফেস্ট-এর ক্যানভাস তাই হয়ে ওঠে দুটো পাড়া। সাদামাটা বাড়ির দেওয়াল যখন সেজে ওঠে সত্যজিতের সিনেমার পোস্টারের ছবিতে, তখন সংস্কৃতি যেন খুঁজে নেয় নিজেকে প্রকাশের ভিন্নতর পরিসর। স্বয়ং সত্যজিৎও ছবি হয়ে চোখ রাখেন লেন্সে, আর সে শিল্পকর্মও ফুটে উঠে মস্ত এক ফ্ল্যাটবাড়ির দেওয়ালে। দেওয়ালের জ্যামিতি ভাঙতেই নাগরিক যাপনের ক্লান্তির ভিতর যেন জেগে ওঠে অন্য পৃথিবী দেখার বাসনা। সত্যজিৎ (Satyajit Ray) নিজেও তো ক্যামেরায় চোখ রেখে খুঁজেছিলেন সেই চেনা তবু অচেনা পৃথিবীটাকেই। আবহমানের শিল্পভাবনা এভাবেই যেন মিশে যায় সমসময়ের সঙ্গে। শিল্পের এই সর্বজনীনতা দেখেই যেন আর-এক দেওয়ালে হেসে ওঠেন আপনভোলা শিল্পী বিস্ময়প্রতিভা রামকিঙ্কর বেইজ (Ramkinkar Baij)। দর্শক চোখ মেলে দেখেন, সাধারণ জামা-কাপড় ইস্ত্রি করা দোকানটাও কেমন বদলে গেছে শিল্পিত ভাবনায়।

ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

আবার কোথাও বা উঠে এসেছে কৃষি আইন বাতিলের ‘রায়’, কোথাও আবার শহরের মনুমেন্ট আর বিবিধ চাপে আমাদের নুয়ে পড়া শিরদাঁড়া মিশে গেছে এক হয়ে। ক্ষমতা, ক্ষমতার সন্ত্রাস, অবিরাম নজরদারির আওতায় ত্রস্ত মানুষের জীবনও উঠে এসেছে নানা ইনস্টলেশনের মাধ্যমে।

ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

[আরও পড়ুন: ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা, শঙ্খ ঘোষকে বিশেষ শ্রদ্ধা]

প্রত্যাশিত ভাবেই শিল্পের এই অভিনব প্রকাশ সাড়া ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পথচলতি রাস্তা, চেনা বাড়ি যে এমন ভাবে বদলে যেতে পারে, তা হয়তো অনেকেই ভাবেননি। তাঁরা ভিড় করেছেন বিস্ময়ে। যা দেখে খুশি শিল্পী সনাতন দিন্দা। বলছেন, “অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিল্পী এবং তাঁর কাজের সঙ্গে মানুষের একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে রয়েছে। যে কোনও কারণেই হোক একটা ভেদাভেদ যেন থেকে গিয়েছে। সেই দূরত্ব আমরা মুছে দিতে পেরেছি অনেকটাই। শিল্প যে ভূমি থেকে তৈরি সেই ভূমির কাছে আমাদের ফিরতে হবে। মানুষ আর শিল্পের মধ্যেকার দূরত্ব যত কমবে, মানুষও তত শিল্পের কাছে ফিরবেন। কোনও একটা গণ্ডিবদ্ধ পরিসরে শিল্পের মূল্যায়নের দিন বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এবারের ফেস্ট-এ যা সাড়া পেয়েছি তাতে আমি তৃপ্ত।”

ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

[আরও পড়ুন: ভয়কে জয় করার গল্প বলে সোহাগ সেন ও কৌশিক বসুর নতুন নাটক ‘ধ্বস’]

জীবনই সবথেকে বড় ক্যানভাস। মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার থেকে বড় শিল্প বোধহয় আর কিছু হয় না। যাপন আর শিল্পের এই এক বিন্দুতে মিশে যাওয়াই সম্ভবত শিল্পের সার্থক উদযাপন। তৃতীয়বারের বেহালা আর্ট ফেস্ট সেই বার্তাই দিচ্ছে। আর এই আয়োজনে সামিল হয়েছে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-ও। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ব্যতিক্রমী শিল্পভাবনার সাক্ষী থাকতে পারেন আপনিও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement