অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের সুর আরও চড়ল। বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তুললেন রাজ্যপাল নিজেই। রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বাগডোগরা বিমানবন্দরে (Bagdogra Airport) নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। সেখানেই একাধিক বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দেন। কটাক্ষের সুরে ধনকড় বলেন, ”আমি খুবই আশ্চর্য হলাম, যখন শিক্ষামন্ত্রী আমার সঙ্গে আলোচনা না করেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করবেন বলে জানালেন। আপনারা এক কাজ করুন, আচার্য কেন? মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালই করে দিন। তাতেই আপনাদের শান্তি হবে।”
এর আগে শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আরও একবার অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, “এমন আচার্য থাকলে শিক্ষাজগতের অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ হওয়ার কথা। আমাদের ভাগ্য ভাল যে আমরা দ্রুতগতিতে শিক্ষার উন্নতি করতে পারছি। উনি শিক্ষাদপ্তরের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করেন না। সারাক্ষণ বেআইনি কাজ করেন। একটা প্রস্তাব পাঠালে হিমঘরে পাঠিয়ে দেন। কোনও সদর্থক, কোনও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। সবসময় শুধু হুমকি দেওয়ার প্রবণতা। ইউজিসি দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন।” পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী কেরলের রাজ্যপালের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করা যায় কিনা, সে বিষয়ে সাংবিধানিক ও আইনি দিক খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজন হলে আইনজ্ঞের পরামর্শ নেবে শিক্ষাদপ্তর।
[আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা, গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে হাই কোর্টে বাবা-মা]
আর রবিবার তিনদিনের দার্জিলিং সফরে গিয়ে ধনকড় এই প্রসঙ্গেই মুখ খুললেন। মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বসানো নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্যের বিরোধিতায় তিনি বলেন, ”আইন কী বলে? রাজ্যপাল, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও, তাঁকে না জানিয়ে কি উপাচার্য নিয়োগ করা যেতে পারে? দেশে কোথাও এমন আইন নেই। রাজ্যপালকে না জানিয়ে যতগুলি নিয়োগ হয়েছে সেগুলিকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে, না হলে আমকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।” এরপরই ক্ষোভের সুরে তাঁর মন্তব্য, ”বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেন? মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালই করে দিন।” এ নিয়ে রাজ্যপালকে পালটা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর মন্তব্য, ”রাজ্যপাল নিজেকে কী ভাবেন? সংবিধানে ওঁর নির্দিষ্ট কাজ বলা আছে। শিক্ষামন্ত্রী একটা সময়োপযোগী প্রস্তাব দিয়েছেন। ওনার সঙ্গে কথা বলতে হবে কেন?”
[আরও পড়ুন: Babul Supriyo: ‘নিজগুণে পরের পর উইকেট পড়ছে’, বিজেপির অন্তর্কলহ নিয়ে খোঁচা বাবুলের]
তাঁর আরও বক্তব্য, ”পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি খুবই চিন্তাজনক। প্রজাতান্ত্র ব্যবস্থা ভেঙে। সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রকাশ্যে অনাদর করা হচ্ছে। এটা বরদাস্ত করা যাবে না। রাজ্যপাল হিসেবে আমার দায়িত্ব সংবিধানকে রক্ষা করা। আমি সেই চেষ্টাই করে চলছি।” শ্লেষের সুরে তাঁর আরও বক্তব্য, ”মুখ্যসচিব এবং অতিরিক্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব – দু’জনেই মোমের পুতুল। ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনও লাভ হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া ওদের জিভ নড়ে না।”