shono
Advertisement
SIR

'নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় নেই!' জঙ্গলমহলে এনুমারেশন ফর্ম নিতে অস্বীকার ১২৬ আদিবাসীর

জল, জমি, জঙ্গলের ওপর আদিম অধিকারের দাবি পরিবারগুলির।
Published By: Kousik SinhaPosted: 08:42 PM Dec 01, 2025Updated: 09:13 PM Dec 01, 2025

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় নেই! এহেন দাবি তুলে এনুমারেশন ফর্ম নিতে অস্বীকার ১২৬ জন আদিবাসী বাসিন্দার। যারা বেশিরভাগই রাওতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেদুয়াশোল-সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানীবাঁধ ব্লকে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার নিয়েছে। জঙ্গলমহলের একেবারে প্রান্তিক এলাকায় থাকা আদিবাসী পরিবারগুলির দাবি, “এই ভূখণ্ডের জল, জমি, জঙ্গলের ওপর আদিম অধিকার আমাদের। বাইরের কারও তৈরি নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি আমরা মানি না।” একসঙ্গে এতগুলি পরিবার এনুমারেশন ফর্ম নিতে না চাওয়ায় কার্যত সেখানে থমকে গিয়েছে এসআইআর প্রক্রিয়া।

Advertisement

যদিও সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন। গত এক সপ্তাহ ধরে ব্লক প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচনী দপ্তর মিলিয়ে অন্তত কয়েক দফায় ওই পরিবারগুলির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কেন প্রয়োজন ফর্ম পূরণ? তা বোঝাতে বারবার গ্রামে গিয়েছেন আধিকারিকরা। কিন্তু এরপরেও তাঁদের অনীহা কাটছে না। আধিকারিকদের কথায়, ''দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাঝি সম্প্রদায়ের একটা প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যেই নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত গুজবে ওই মানুষগুলির মনে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। সেই ভীতিই এখন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় বাধা।'' রানীবাঁধের বিডিও অনীশা যশ জানিয়েছেন, 'আপাতত ১২৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভয় কাটাতে আমরা ধারাবাহিকভাবে কথা বলছি। এসআইআর যে কোনও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নথি নয়, এটা বোঝানোর চেষ্টা চলছে।'' তাঁর কথায়, ''এখনও বেশ কিছুটা সময় আছে। কেউ যদি পরে মত বদলান, আমরা ফর্ম নেব। কাউকে জোর করা হবে না, প্রয়োজনে বারবার বোঝানো হবে।”

এদিকে মাঝি সম্প্রদায়ের সংগঠক হিসেবে পরিচিত বাবুরাম এই পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। প্রশাসনের একাংশের মতে, তাঁর নীরবতার কারণে বিভ্রান্তি আরও বাড়ছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।

সিপিএমের রানীবাঁধ অঞ্চল কমিটির সদস্য বিধান মণ্ডল এই অচলাবস্থার জন্য সরাসরি প্রশাসনের অবহেলা এবং শাসকদলের দ্বিচারিতাকেই দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মাঝি  সম্প্রদায়ের পরিবারগুলির মধ্যে যে ভুল তথ্য বহু দিন ধরে ছড়ানো হচ্ছিল, তা প্রশাসন জানত। তা কাটাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি।'' তাঁর দাবি, ফর্ম ধরিয়ে শুরু বলা হয়েছে এটা বাধ্যতামূলক! আর এতেই সমস্যা আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য সিপিএম নেত্রীর। 

অন্যদিকে রানীবাঁধ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি উত্তম কুম্ভকার বলেন, “এসআইআর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার নথি নয়, এটা কিছু মহল ভুলভাবে ছড়াচ্ছে। আদিবাসীদের একটি সামাজিক সংগঠনের নামে মানুষের মনে ভুল বার্তা ঢোকানো হয়েছে। প্রশাসন চেষ্টা করছে, আমরাও পাশে আছি।” যদিও এই বিষয়ে সরাসরি রাজ্য সরকারকেই একহাত নিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। স্থানীয় বিজেপি নেতা দুখী মুদির অভিযোগ, “রাজ্য রকার প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রথম থেকেই স্বচ্ছতা দেখায়নি। ফলে মানুষ আতঙ্কে আছে। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই আজ এত বড় অংশ ফর্ম নিতে রাজি নয়।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এনুমারেশন ফর্ম নিতে অস্বীকার ১২৬ জন আদিবাসী বাসিন্দার।
  • যারা বেশিরভাগই রাওতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেদুয়াশোল-সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দা।
  • ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানীবাঁধ ব্লকে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার নিয়েছে।
Advertisement