সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: একশো-দুশো কিমি কিংবা এক হাজার কিমি নয়। ১২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ কোনও টাকাপয়সা ছাড়াই পায়ে হেঁটে ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ ও চারটি ধাম দর্শন করার শপথ নিয়েছেন ভোপালের দুই যুবক। প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ কাশী বিশ্বনাথ ঘুরে বৈদ্যনাথ হয়ে এবার কলিযুগের ধাম জগন্নাথ- পুরীর(Puri) পথে হাঁটছেন
তাঁরা। এই পথেই তাঁরা বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়া(Purulia) শহরে পা রাখেন। সেখানে রাত কাটিয়ে শুক্রবার দুপুরে রওনা দেন। এদিন মহাশিবরাত্রিতে রাত কাটান পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের চাকলতোড়ে। দীর্ঘ এই যাত্রা পথে তাঁদের কথা একটাই, “শিব সে শুরু, শিব পর খতম”। সেই সঙ্গে তাদের বার্তা, ‘একতাই সব।’
এই বিশ্বাসে ভর করেই পায়ে-পায়ে গ্রাম ছাড়িয়ে একের পর এক শহর পার করছেন। মধ্যপ্রদেশের ভোপালের(Bhopal) রহেটি জেলার শ্রীহোরের বাসিন্দা ঋত্বিক চৌহান ও হড়দা জেলার বাসিন্দা অভিষেক যদুবংশী। গত ৫ জানুয়ারি ঘর থেকে বের হন তারা। প্রথমেই তাঁরা ২১ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রামলালার দর্শন করে প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ কাশী বিশ্বনাথ(Kashi viswanath) দর্শন করেন। স্নাতক ঋত্বিক ও বি কম নিয়ে কলেজে পড়া অভিষেক দুই বন্ধু। তাদের কথায়, “মনে শান্তির জন্যই এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ ও চারটি ধাম দর্শন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ১২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘপথে কোনও টাকাপয়সা সঙ্গে নেই। যেখানেই যাচ্ছি আপনা আপনি খাবার, রাত কাটানোর আশ্রয়-সহ সব ব্যবস্থা পাচ্ছি। একতার বার্তা নিয়েই আমাদের এই যাত্রা”।
[আরও পড়ুন: ‘সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর অত্যাচারই হয়নি’, বিস্ফোরক দাবি সৌগতর]
বৃহস্পতিবার রাতে ওই দুই যুবকের থাকার ব্যবস্থা করে দেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। শুক্রবার সকালে তিনি পুরুলিয়া শহরের কার্যালয়ে ওই দুই যুবককে গেরুয়া উত্তরীয় ও গলায় মালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। সাংসদ বলেন, “ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ওনারা যেন সুস্থ থাকেন এবং অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।” তাঁর ফেসবুকেও ওই দুই যুবকের ছবি দিয়ে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে ওই দুই যুবকের পিঠে রয়েছে রুকস্যাক। সেখানে পতপত করে উড়ছে দেশের পতাকা। সেই সঙ্গে শিবের ছবি দিয়ে গেরুয়া পতাকাও। ব্যাগের পিঠে ছোট্ট ব্যানারে লেখা রয়েছে তাদের বিশ্বাসের কথা, “শিব সে শুরু, শিব পর খতম”।
[আরও পড়ুন: বাম-কংগ্রেস জোটে কাঁটা শরিকরা, আসন সমঝোতায় শঙ্কায় সিপিএম]
জগন্নাথ-পুরি দর্শনের পর তাঁরা তৃতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ মল্লিকার্জুন পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে আরেক জ্যোতির্লিঙ্গ ও ধাম তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম। তারপর মহারাষ্ট্রের তিন জ্যোতির্লিঙ্গ ভীমাশঙ্কর, ত্রিম্বকেশ্বর, গ্রীষ্ণেশ্বর পরিদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর পর সোজা গুজরাট গিয়ে সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ। সেখানেই দ্বারকা ধাম ঘুরবেন। এর পর নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ হয়ে সোজা কেদারনাথ। তারপর সত্যযুগের ধাম উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথ হয়ে তাদের রাজ্য মধ্যপ্রদেশে প্রবেশ। সেখানে মহাকালেশ্বর, ওমকারেশ্বর দুই জ্যোতির্লিঙ্গ পরিদর্শন শেষে এই যাত্রা সম্পন্ন করবেন তারা। তবে এই যাত্রা কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তিতে হেঁটে চলেছেন। পার হচ্ছেন একের পর এক রাজ্য।