শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে আগেই প্রশংসা কুড়িয়েছে রাজ্য সরকারের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। এবার সেই প্রকল্পে পাওয়া টাকা জীবনে চলার পথে কীভাবে নতুন দিশা দেখাতে পারে, তার নজির রাখলেন শিলিগুড়ির ‘কন্যাশ্রী’ অঞ্জলি দাস। কন্যাশ্রীর এককালীন ২৫ হাজার টাকায় স্টেশনারি এবং প্রসাধনীর দোকান খুলে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সে। তার ওই কৃতিত্বকে সাধুবাদ জানিয়েছে প্রশাসন থেকে শুরু করে ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা। বুধ এবং বৃহস্পতিবার ইউনিসেফ, জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা কন্যাশ্রী ছাত্রীর দোকান ঘুরে দেখার পাশাপাশি তাঁর প্রয়াসের ভূয়সী প্রশংসা করে গেলেন।
শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত লাগোয়া রাজগঞ্জ ব্লকের সন্ন্যাসীকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন জমিদারপাড়ার বাসিন্দা অঞ্জলি। বাবা সন্তোষ দাস পেশায় কৃষক। অঞ্জলির আরও তিন দাদা রয়েছে। বড় ছেলে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, মেজ ছেলে গ্যারাজের কাজ করেন। আর ছোট ছেলে বোনের পাশে থেকে ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করছেন। সবমিলিয়ে, টানাটানির সংসারে এখন অঞ্জলিও দাদাদের মতো পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে তার প্রসাধন সামগ্রীর দোকান দিয়ে।
[আরও পড়ুন: প্রদীপ থেকে শাড়িতে আগুন, প্রথমবার সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে গিয়ে মৃত্যু খুদের]
বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্ব ভারতের ইউনিসেফের সুপারভাইজার প্রিয়া নাগার, ইউনিসেফের সাধারণ সদস্য পারমিতা উকিল, রাজগঞ্জের বিডিও নরবু শেরপা, কন্যাশ্রী বিভাগের আধিকারিক গোপাল বণিক, সন্ন্যাসীকাটা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় দাস এবং নোডাল শিক্ষক অজিত মণ্ডল অঞ্জলির দোকান দেখতে যান। কীভাবে কন্যাশ্রীর টাকায় অঞ্জলি স্বাবলম্বী হয়েছে, সেই গল্প তাঁর শোনেন সকলে। অঞ্জলি বলেন, “রাজ্য সরকার এত টাকা দিচ্ছে, আমাদের মতো মেয়েদের স্বাবলম্বী হতে। আমি আগামিদিনের কন্যাশ্রীদের বলতে চাই, কন্যাশ্রীর টাকা বাজে খরচ না করে নিজের পরিবারের উপকারে লাগে এমন কাজ করতে।” ইউনিসেফের সাধারণ সদস্যা পারমিতা উকিল বলেন, “কন্যাশ্রী মেয়েরা এর আগেও সমাজের অনেক উন্নয়নে সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। বাল্যবিবাহ রোধ, রোগ সচেতনতায় কন্যাশ্রীর ভূমিকা অভূতপূর্ব। আর অঞ্জলি যে কাজ করেছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। তার কাজ আগামিদিনের কন্যাশ্রীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। ওর এই সাফল্য সরকারি ‘কন্যাশ্রী’ বইতেও প্রকাশিত হবে।”
[আরও পড়ুন: সম্পর্কে আপত্তি, প্রেমিকের রহস্যমৃত্যুতে কাঠগড়ায় কিশোরীর পরিবার]
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন,“অঞ্জলির মতো মেয়ে আমাদের সমাজের গর্ব। বিভিন্ন সরকারি এবং স্কুলের অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করে, সংবর্ধনা দিয়ে তাঁর জীবনের এই সাফল্যের কথা তুলে ধরব। এতে অন্যান্য কন্যাশ্রীরাও এতে অনুপ্রাণিত হবে।” ২০১৭ সালে সন্ন্যাসীকাটা হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে পাস করে শিলিগুড়ির সূর্য সেন কলেজে কলা বিভাগে ভরতি হন অঞ্জলি। কলেজে ভরতির পর কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা হাতে পায় সে। পরের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কন্যাশ্রীর সেই টাকায় নিজেই শুরু করে প্রসাধনীর ব্যবসা। এখন অঞ্জলির দোকান চলছে রমরমিয়ে। যা নজর কেড়েছে ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক স্তরের সংগঠনেরও। আগামিদিনে অঞ্জলি সমাজের অন্যান্য কন্যাশ্রীদের নতুন দিশা দেখাতে সাহায্য করবে বলে, আশাপ্রকাশ করে গেলেন ইউনিসেফের সদস্যরা।
The post কন্যাশ্রীর টাকায় ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী , ইউনিসেফের প্রশংসা কুড়ল শিলিগুড়ির কন্যা appeared first on Sangbad Pratidin.
