চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: সমবায় ভোট পরবর্তী হিংসায় উত্তপ্ত নন্দীগ্রাম। এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করার অভিযোগে কাঠগড়ায় বিজেপি। রবিবার রাতে নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের ৭ নম্বর জলপাই গ্রামে বিজেপি কর্মীদের সশস্ত্র বাহিনী চড়াও হয় বিষ্ণুপদ মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে। ভোজালি দিয়ে তাঁকে কোপানো হয় বলেই অভিযোগ। বেধড়ক মারধর করা হয় তৃণমূল কর্মীর দাদা গুরুপদ মণ্ডলকেও। নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি তিনি। এদিকে, এই খুনের ঘটনার প্রতিবাদে দফায় দফায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরা।
রবিবার ছিল তমলুক কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ভোট। তাতে নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের কাঞ্চননগর হাই স্কুল ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বিজেপি-তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তখন থেকে উত্তেজনার পরিবেশ ছিল নন্দীগ্রামে। এই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ভোটে হলদিয়া, সুতাহাটা, মহিষাদল, ময়না,তমলুক, চণ্ডীপুর-সহ মোট বারোটি শাখায় ৬৯টি আসনে ভোট হয়েছিল। তার মধ্যে ৫৬টি আসনে জয়ী হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নিরঙ্কুশ বোর্ড গঠনের ক্ষমতা অর্জন করেছে। শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম এক এবং দুই নম্বর ব্লকে বিজেপি ১৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। সেই জয়ের দম্ভ ভোট পরবর্তী প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছে। যার চরম তাণ্ডবের শিকার হয়েছেন নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের ৭ নম্বর জলপাই গ্রামের বিষ্ণুপদ মণ্ডল। অভিযোগ, রবিবার রাতে ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয় বিজেপি আশ্রিত একদল দুষ্কৃতী। তাদের ভোজালি দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়। দুষ্কৃতীদের মারধরে জখম হন তৃণমূল কর্মীর দাদা গুরুপদও। তিনি নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি।
খুনের ঘটনায় সোমবার সকালে দফায় দফায় প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। নন্দীগ্রামের গড়চক্রবেড়িয়া, সোনাচূড়া, হাজরাকাটা-সহ বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করে তৃণমূল। এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সহ-সভাপতি সেক আল রাজি জানিয়েছেন,"সামান্য সমবায় ব্যাংকে শাখায় জয়ী হয়ে বিজেপির কর্মীরা ক্ষমতা জাহির করতে নন্দীগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব শুরু করেছে। আমাদের সক্রিয় কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে প্রশান্ত মণ্ডল,মানস সেন,দিব্যেন্দু দাস, রাজকুমার মণ্ডল-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী খুন করেছে। এই খুনিদের গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তির দাবি করেছি।" স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন,"বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী, খুনিরা নন্দীগ্রামের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করেছে। নন্দীগ্রামের মানুষ এবার হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছেন বিজেপি ধর্মের কথা বললেও আসলে সাম্প্রদায়িক শক্তি, খুনিদের দল। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে বিজেপিকে কোণঠাসা করেছে তৃণমূল। সেটা ওরা মেনে নিতে পারছি না। সামান্য একটি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ওরা প্রতিহিংসার পথ ধরেছে। আগামী দিনে তার খেসারত দিতে হবে ওদের।" যদিও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল জানিয়েছেন,"এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোন কর্মী জড়িত নেই। ওটা ওদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব হতে পারে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে খুন বলে মনে করছি।" নন্দীগ্রাম থানার আইসি জানান,"পরিস্থিতি মোকাবিলায় নন্দীগ্রামে সর্বত্র পুলিশি টহলদারি চলছে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।"