ধীমান রায়, কাটোয়া: পুকুরের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের ঝামেলা। জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। কিন্তু মীমাংসা হয়নি। এসবের মাঝে সোমবার বাজার যাচ্ছি বলে বেরিয়ে ভাতার থানার সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা বৃদ্ধের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে। দগ্ধ অবস্থায় ওই তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার এসএসকেএমে মৃত্যু হল তাঁর।

জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম সুশান্ত দত্ত। তাঁর বাড়ি লাগোয়া বিশাল আয়তনের পুকুর। সেই পুকুরে কয়েক বছর আগেই মাছচাষ করেছিলেন হোটেল ব্যবসায়ী ওই যুবক। কিন্তু তারপর থেকেই ওই পুকুরের মালিকানা নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আর পুকুরের দখল নিতে না পারায় দীর্ঘকাল ধরেই প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন সুশান্ত। এসবের মাঝেই সোমবার বিকেলে ভাতার থানার গেটের কাছে নিরবিলি জায়গা খুঁজে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বৃদ্ধ। এই ঘটনা ঘিরে এদিন এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সারা শরীর যখন দাউদাউ করে পুড়ছিল তখনই ভাতার থানার পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি থানা থেকে কম্বল বের করে চাপা দিয়ে আগুন নেভান তিনি। নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। শেষরক্ষা হল না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের পাশে ভাতার বাজারে অবস্থিত বহু পুরানো আমলের পুকুর 'সন্তোষ সায়ের।' পুকুরের চারধারে রয়েছে বেশকিছু বসতবাড়ি ও দোকানপাট। সুশান্ত দত্তদের বাড়ি ও ব্যবসাও রয়েছে 'সন্তোষ সায়ের'-এর পাড়েই। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলচণ্ডা মৌজায় ৯৯৩ দাগনম্বরে ১ একর ৭৩ শতক আয়তনের এই পুকুরটি বছর আটেক আগে তিনি কিনেছিলেন সুশান্ত। তারপর তাদের নামে রেকর্ড পরিবর্তনও হয়ে গিয়েছিল। পুকুর কেনার পর ২০১৯ সালে সুশান্তবাবু পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। জানা গিয়েছে, সন্তোষ সায়ের নামে ওই পুকুরটি খাস বলে দাবি করে আদালতে মামলা করেন স্থানীয় কয়েকজন। তারপর থেকেই জটিলতা জারি। সেই থেকেই পুকুরের উপর আর সুশান্তর দখল নেই। যদিও সেখানে কেউ মাছ ধরতে যায়নি। কলকাতার উচ্চ আদালতে মামলা চলছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাই কোর্ট থেকে সম্প্রতি বর্ধমান জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই পুকুর নিয়ে জটিলতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। জেলাশাসক গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং গত ৩ মার্চ দুদফায় শুনানি ডাকেন। ভাতার ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, "ওই পুকুরটি সরকারি খাস সম্পত্তি। সর্বশেষ শুনানির পর জেলাশাসক কেসটি খারিজ করে দেন এবং মামলাকারীকে জরিমানা করেন। ওই পুকুরের মালিকানা সুশান্ত দত্ত-দের নয়।"