শেখর চন্দ্র, আসানসোল: চিটফান্ডের (Chit Fund) টাকা লেনদেনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল (TMC) নেতা রাজু সাহানি। অথচ তিনি নাকি জানতেনই না, চিটফান্ডের টাকা তাঁর হাতে এসেছিল। শনিবার আসানসোল (Asansol) ফৌজদারি আদালতে রাজু সাহানিকে পেশ করা হলে সওয়াল-জবাবে এমনই দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী। যদিও সিবিআইয়ের তরফে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বের পক্ষে ধারাল যুক্তি খাড়া করা হয়। তাতেই খারিজ হয় রাজু সাহানির জামিনের আবেদন। একঝলকে দেখে নেওয়া যাক এজলাসের সওয়াল-জবাব।
শুক্রবার নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৮০ লক্ষ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ উদ্ধারের পর রাজু সাহানিকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই (CBI)। অভিযোগ ছিল, বর্ধমানের এক চিটফান্ডে আর্থিক লেনদেন করেছেন তিনি। তাঁর কাছে আসত ওই টাকা। হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এত সম্পত্তি উদ্ধার হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার আসানসোল ফৌজদারি আদালতে তাঁকে তোলা হলে সওয়াল-জবাবের পর বিচারক তরুণকান্তি মণ্ডল রাজু সাহানিকে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজুর পক্ষে আইনজীবী প্রদীপ কর ও প্রসেনজিৎ নাহার তরফে জানানো হয়, রাজুর গ্রেপ্তারি আইন মেনে হয়নি। কারণ, তাঁকে আগে সমন পাঠানো হয়নি। শুধুমাত্র হানা দিয়েই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। এছাড়া তাঁর বাড়ি থেকে যে পরিমাণ টাকা ও সম্পত্তির নথি উদ্ধার হয়েছে দাবি সিবিআইয়ের, সেসবের সিজার লিস্ট দেওয়া হয়নি।
[আরও পড়ুন: দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে দেশ, ব্রিটেনকে টপকে বিশ্বের পঞ্চম স্থানে ভারতের অর্থনীতি]
রাজুর নিজের রিয়েল এস্টেটের (Real Estate) ব্যবসা, তাঁর পরিবারের সকলেই ব্যবসায়ী। তাই তাঁর বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার হতেই পারে। এর সঙ্গে চিটফান্ডের যোগ নেই। এছাড়া বর্ধমান সন্মার্গ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার সৌম্যরূপ ভৌমিকের কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। তা শোধও করে দেওয়া হয়। লেখা নথিপত্রের মাধ্যমেই সেই লেনদেন হয়। কোনও কারচুপি নেই। তাঁর গ্রেপ্তারি সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজু নিজেও দাবি করেন, সৌম্যরূপের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সূত্রে আলাপ। তিনি যে চিটফান্ড চালান, তা জানতেনই না। ওই টাকা চিটফান্ডের, তা জানা ছিল না বলে দাবি রাজুর।
এদিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার ও শিবেন্দ্র সাচারের দাবি, ঘটনা সেই ২০১৪ সালের। চিটফান্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ সামনে আসতেই বর্ধমানের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়ায়। তিনি গ্রেপ্তার হন ২০২১ সালে। এই জেলা থেকে দ্বিতীয় যে নামটি উঠে আসে, সেটাই রাজু সাহানির। তাঁর নাম সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিটে ছিল না। পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট রাজুর নাম জুড়ে দেওয়া হয়। সম্পত্তি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে বারবার ডাকা হলেও তদন্তে সহযোগিতা করেননি। তাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী। এছাড়া যে চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে, তার মালিক সৌম্যরূপ ভৌমিক এখন পলাতক। তাঁর নাগাল পেতে রাজু সাহানিকে জেরা করা খুবই দরকার। তাই হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর রাজু সাহানিকে ৫ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: ‘সবচেয়ে বড় পাপ্পু অমিত শাহ’, অভিষেকের বয়ান টি-শার্টে ছেপে প্রচারে তৃণমূল কর্মীরা!]
হালিশহরের লালকুঠিতে রাজুর পৈতৃক বাড়ি। লোহার ছাঁট এবং পাটের ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করেন। তবে মাত্র কয়েক বছরেই নাকি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান রাজু। হালিশহরে গঙ্গার ধারে হাইনেস্ট গেস্ট হাউস, নিউটাউনে ফ্ল্যাট এবং সিটি সেন্টারের কাছে বাড়িও রয়েছে। তাঁর বাড়ি থেকে সিবিআই ৮০ লক্ষ টাকা, ২.৭৫ কোটি টাকার সম্পত্তির ডিড, থাইল্যান্ডে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে। এই সম্পত্তির নেপথ্যে অর্থ কোথা থেকে এসেছে, তারই তদন্ত করতে চায় সিবিআই।