অর্ণব দাস, বারাকপুর: শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি মানেই একাধিক সমীকরণ। আর সব ফ্যাক্টর মসৃণ হলে তবেই বাজিমাত সম্ভব। আর উপনির্বাচনের নৈহাটিতে সেই বাজিমাত করতে চলেছে শাসকদল তৃণমূল, তা নির্বাচনী আবহাওয়াতেই স্পষ্ট। শাসক শিবিরের প্রার্থী দক্ষ সংগঠকের বিরুদ্ধে 'ভগ্ন' সংগঠনকে ভোটের লড়াইয়ে নামিয়ে বিজেপি কার্যত তৃণমূলকে ওয়াকওভার দিতে চলেছে। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।আগামী ১৩ নভেম্বরের উপনির্বাচনে মূল লড়াই তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে আর বিজেপির রূপক মিত্রের মধ্যে। বাম প্রার্থী তথা সিপিএম(এল)-এর দেবজ্যোতি মজুমদার ও কংগ্রেসের পরেশ সরকার কার্যত কোনও ফ্যাক্টরই নন। একনজরে দেখে নেওয়া যাক নৈহাটি উপনির্বাচনের সমীকরণ।
২০১১ সালে রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই নৈহাটিতে ঘাসফুল শিবিরের জয়জয়কার। সেবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, দুঁদে বাম নেতা রঞ্জিত কুণ্ডুকে হারিয়ে জিতেছিলেন তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক। সেই থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপরাজিত তিনি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে পার্থ ভৌমিক বারাকপুর কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হওয়ার পর নৈহাটিতে উপনির্বাচন। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা কেন্দ্র এটি। একমাত্র পাশের কেন্দ্র ভাটপাড়া বাদ দিলে বাকি সাত বিধানসভাই শাসক শিবিরের দখলে। উপনির্বাচনের লড়াই তৃণমূলের কাছে কঠিন নয় আদৌ। লক্ষ্য শুধু জয়ের ব্যবধান বাড়ানো।
নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পুরসভার ৩১টি ওয়ার্ড এলাকা ছাড়াও রয়েছে কাপা-চাকলা, পলাশি-মাঝিপাড়া, জেঠিয়া, শিবদাসপুর এবং আরও চার পঞ্চায়েত। ভোটার সংখ্যা কমবেশি ১ লক্ষ ৯০ হাজার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী ফাল্গুনী পাত্রকে ১৮৮৫৫ ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক। আর চব্বিশের লোকসভা এই কেন্দ্রে ব্যবধান ছিল ১৫৫১৮। তবে উপনির্বাচনে ৫০ হাজার ভোটে জেতার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের সৈনিক দক্ষ সংগঠক এবং দাপুটে নেতা সনৎ দে। পুরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সনৎবাবুর নামই এখানে যথেষ্ট। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি রয়েছেন দলের সঙ্গে। টাউন সভাপতি হিসেবে সংগঠনকে যেমন মজবুত করেছেন, তেমনই তাঁর দাপটও এলাকায় সর্বজনবিদিত। এমনকী সনৎ দে-কে জেতানোর জন্য ময়দানের তিন প্রধান থেকে আইএফএ সচিবও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী বলছেন, , ''আমরা ৫০ হাজার ভোটে জেতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। পার্থ ভৌমিক মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছেন যে আমরা এত মার্জিনে জিতব। সেটাই করে দেখাতে হবে।''
সনৎ দে-র বিপক্ষে বিজেপির প্রার্থী রূপক মিত্র। সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি। এখানে বিজেপি শুধু দ্বিধাবিভক্ত নয়, টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। অর্জুন সিং নামমাত্র প্রচারে নামলেও অনেকেই নিষ্ক্রিয়। শান্তনু ঠাকুর, শুভেন্দু অধিকারীরা প্রচার করে গিয়েছেন। তবে পাশের কেন্দ্র ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক অর্জুনপুত্র পবন সিংকে দেখা যায়নি। বিজেপি এখানে অনেকটাই অগোছালো। অন্যদিকে, বামেরা এখানে সম্মিলিতভাবে প্রার্থী করেছে দেবজ্যোতি মজুমদারকে। তিনি সিপিএম(এল) প্রার্থী। তবে তাঁকে আবার মেনে নিতে চাইছেন না। তাঁদের ভোটটা নিজেদের ঝুলিতে আনতে মরিয়া বিজেপি। তাতে সফল হয় কি না, সেটা দেখার। আর কংগ্রেসের বর্ষীয়ান প্রার্থী পরেশ সরকার কোনও ফ্যাক্টর নন।
তুল্যমূল্য বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, সনৎ দে-র তেমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নেই কেউ। বরং তিনি জিতলে বীজপুর, জগদ্দল, নৈহাটির মাঝে বিজেপির একমাত্র দখলে থাকা ভাটপাড়া অর্থাৎ অর্জুন-গড়কে চক্রব্যূহে ঘিরে ফেলা আরও সহজ হবে বলে মত স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের।