নন্দন দত্ত, সিউড়ি: জীবনের তাগিদেই বুঝি সকলের জন্য আছে সকলে। তাই তো এক পথকুকুরকে বাঁচাতে রক্ত দিল আরেক পথকুকুর (Street dogs)। এমনই বিরল ঘটনার সাক্ষী বীরভূমের সিউড়ি (Suri)। যা এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল নিঃসন্দেহে। একটি স্বেচ্ছাসেবী পথ পশুপ্রেমীদের উদ্যোগে শুক্রবার সরকারি পশু হাসপাতালে সারারাত জাগল নির্বাকন্ন সংস্থার ছেলেরা। সংগঠনের সম্পাদক রাজশ্রী ঘোষের দাবি, কুকুর থেকে কুকুরের শরীরে এভাবে রক্ত পরিবহণ গোটা রাজ্যেই প্রথম।
একটি কুকুরের ক্যানসার (Cancer)। আরেকটির পেটের তলায় মস্ত টিউমার। দু’জনেই পথ কুকুর। তাই তাদের কোনও পোশাকি নাম নেই। দেখভালেরও কেউ নেই। কিন্তু দু’জনের শরীরে রক্তাল্পতা বাসা বেঁধেছে। রক্তের (Blood)দরকার। কিন্তু কীভাবে দেওয়া যাবে রক্ত? এদিকে, রক্ত না দিলেও দু’জনের কেউই বাঁচে না। তখনই শুরু হয় কুকুরকে রক্ত দেওয়ার উদ্যোগ। একটি কুকুর এসেছিল রামপুরহাট ভাঁড়শালা পাড়া থেকে। তার বাঁ পায়ে ক্যানসার। গত একমাস ধরে তাকে দুটি কেমো দেওয়া হয়। তাতেই শুকিয়ে যায় শরীরের রক্ত। পরে তাকে বাঁচাতে পা কেটে বাদ দিতে হয়। তখনই শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: শুনানি চলাকালীন আদালতের লকআপেই আত্মহত্যার চেষ্টা বন্দির, শোরগোল বারুইপুরে]
অন্যদিকে, সাঁইথিয়া জিয়ুইগ্রাম থেকে একটি কুকুর এসে পৌঁছয় সংস্থার সিউড়ি দপ্তরে। তার শরীরে টিউমার। অস্ত্রোপচার না করলে প্রাণে বাঁচানো কঠিন। তার শরীরে রক্তের আকাল। তাই দুটি কুকুরের জন্য রক্তের দরকার। এদিকে রক্ত সংগ্রহের কোনও পরিকাঠামো রাজ্যে নেই। রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ পর্যন্ত নেই। জেলাশাসকের উদ্যোগে রক্ত সংগ্রহের সন্ধান মেলে পুণেতে (Pune)। সংস্থার পক্ষ থেকে পুণে থেকে আনা হয় রক্তের ব্যাগ। কিন্তু কে দেবে রক্ত? সংগঠনের কর্মীদের বাড়িতে বেশিরভাগ কুকুরই বিদেশি প্রজাতির। ফলে পথকুকুরের রক্তের জন্য খোঁজ শুরু হল পথকুকুরেরই।
সিউড়ির পথ থেকে লালু, ভুলু, কেলো, পেটমোটা মিলিয়ে ছ’টি কুকুরকে তুলে আনা হয়। তাদের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে অসুস্থ কুকুরের রক্তের গ্রুপ মেলে কি না, সেই পরীক্ষা চলে। তাদের মধ্যে দুটি কুকুরের রক্তের সঙ্গে দুই পথকুকুরের রক্তের গ্রুপ মিলে যায়। শুক্রবার সারারাত ধরে সিউড়ি পশু হাসপাতালে রক্তের দেওয়ানেওয়া শুরু হল। রাত একটা পর্যন্ত চলল সেই প্রক্রিয়া। রাত জাগলেন রাজশ্রী, শুভজিৎ, জয়দীপ, সুকান্ত, সৌরভরা।
[আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে কলেরার প্রকোপ, কামারহাটির আরও ৪৪ জনের শরীরে মিলল উপসর্গ]
পশু চিকিৎসক সৌরভ কুমার বলেন, ”দুটি কুকুরের রক্তাল্পতা ছিল। এই পরিষেবা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হল।” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক রাজশ্রী ঘোষ বলেন, ”সারা রাজ্য জুড়ে আমাদের পথ পশুদের জন্য ২৭০ জন সদস্য আছে। আমরা রক্তসংগ্রহের জন্য বাড়তি ব্যাগ মজুত করে নিয়েছি। চারটি কুকুরই ভাল আছে। আমরা সারাক্ষণ তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি।” সংগঠনের অপর্ণা দাসের করেন, পথকুকুরের রক্ত নিয়ে রক্তদান, রাজ্যে তাদের উদ্যোগে এই প্রথম শুরু হল।