অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: সীমান্তের ওপারের অস্থিরতায় নজরদারি ও কৃষকদের সুবিধার্থে সীমান্তের জিরো লাইনের কাছাকাছি জওয়ানদের পাঠাল বিএসএফ। শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রানিনগরের রাজানগর সীমান্তের জিরো লাইনে পৌঁছে গেলেন জওয়ানরা। রাজানগরে মরা পদ্মানদীর ধারে 'বিএসএফ কৃষক সহযোগিতা উৎসব' নামের অনুষ্ঠানে একথা ঘোষণা করেন বিএসএফের ডিআইজি অনিলকুমার সিং। তাঁর কথায়, "সীমান্তের কৃষকের সুবিধার জন্য বিএসএফকে জিরো লাইনে পাঠানো হল।"
তবে সীমান্তে ওই এলাকায় বিএসএফ কি নজরদারি চালাত না? উত্তর নজরদারি চলত, কিন্তু এতদিন যেখানে বিএসএফ চৌকি ছিল সেটা ইন্দো-বাংলা বর্ডার থেকে অনেকটা ভিতরে। ফলে কৃষকদের জমিতে যাওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখাতে হত। ফলে সময় লাগত অনেকটা। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হত। তা বন্ধ করার জন্য অনেক দিনের প্রচেষ্টায় বিএসএফকে জিরো লাইনে পাঠানো হল, বলে জানিয়েছেন ডিআইজি।
শুধু কি কৃষকদের সমস্যা মেটানো? না কি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জেরেও এই সিদ্ধান্ত? উত্তরে বিএসএফের ডিআইজি জানান, "বলা যায় ওটাও একটা কারণ।" বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে খোলা সীমান্তে সেদেশের নিপীড়িত মানুষ যাতে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে না পড়ে সেটাও দেখতে হবে বিএসএফকে। একথাও স্বীকার করেন তিনি।
সীমান্তে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের অত্যাচার একটা বড় বিষয় বলে জানান স্থানীয়রা। তাঁদের কথায় রাজানগর সীমান্ত শুধু নয়, মুর্শিদাবাদ জেলায় এমন বেশ কিছু এলাকা আছে যেখানে বিএসএফ জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের গ্রামের অনেকটা ভিতরে বিএসএফের চৌকি ছিল। অভিযোগ, এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা জমির ফসল কেটে নিয়ে যেত। কৃষকরা প্রতিবাদ করলে গন্ডগোল বাঁধত। সেই সব পরিস্থিতির মোকাবিলার পাশাপাশি, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যই জেলার ফারাক্কা থেকে জলঙ্গির সরকার পাড়া পর্যন্ত ১২২ কিলোমিটার এলাকার মুক্ত সীমান্তে জিরো লাইনে পাঠানো হল বিএসএফের ১৪৯, ৭৩ ও ১৪৬ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের।
রাজানগরে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বিএসএফ ডিআইজি অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানদের ও কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমরা জওয়ানদের জিরো লাইনের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। মাঠে যেতে কোনও অসুবিধা থাকবে না। কিন্তু এর সঙ্গে আপনাদেরও জওয়ানদের সহযোগিতা করতে হবে। কোনও পাচারকারী ঢুকে পড়লে কিংবা কেউ ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিএসএফকে জানিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।"
বিএসএফকে জিরো লাইনে পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যেই সেখানে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ভাবে ক্যাম্প করা হয়েছে। একশো থেকে দেড়শো মিটার পর পর চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার থেকেই তারা জিরো লাইনের কাছে জওয়ানরা যাওয়ায় কৃষকেরা বেজায় খুশি। এক কৃষক খালিদ শেখ জানান, "বিএসএফ জিরো লাইনে যাওয়ায় কী সুবিধা যে হল তা বলে বুঝাতে পারছি না। বলতে পারেন এতদিনে আমরা স্বাধীন হলাম।" এদিনের অনুষ্ঠানে বিএসএফের ডিআইজির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষক, সীমান্ত অঞ্চলের একাধিক প্রধান , জেলাপরিষদ সদস্য, ডোমকলের এসডিও শুভঙ্কর বালা, এসডিপিও শুভঙ্কর বাজাজ-সহ অনেকে।