নন্দন দত্ত, সিউড়ি: গরু পাচার, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি-সহ একাধিক মামলার তদন্তে বীরভূম (Birbhum) কার্যত চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। বোলপুর-সহ আশেপাশের এলাকায় দিনভর তল্লাশি চলছে মঙ্গলবার। জমি রেজিস্ট্রি অফিস-সহ একাধিক জায়গায় ঢুকে নথিপত্র পরীক্ষা করছেন সিবিআই অফিসাররা। এবার তাঁদের কাজে জুড়ল বগটুইয়ের (Bagtui) অগ্নিকাণ্ডও। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বগটুই গ্রাম থেকে। এদের আজ বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হবে।
এদিন বগটুই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নতুন করে গ্রেপ্তারি নিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা মুখ খুলতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, ধৃতরা সকলে বগটুই গ্রামের বাসিন্দা এবং নিহত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের আত্মীয়। ধৃতদের মধ্যে পাঁচজনের নাম – নূর আলি শেখ, শের আলি শেখ, আশিস শেখ, জসিফ শেখ, খায়রুল শেখ। সিবিআই তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এরা সকলেই ঘটনার দিন অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। তবে গোটা বিষয়টি বিশদে জানার জন্য তাদের নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় সিবিআই। আদালতে পেশ করে সেই আবেদনই জানাতে চলেছেন তদন্তকারীরা।
[আরও পড়ুন: অনুব্রতর সম্পত্তির হদিশ পেতে এবার বোলপুরে জমি রেজিস্ট্রি অফিসে হানা সিবিআইয়ের]
গত ২১ মার্চ রাতের দিকে বীরভূমের রামপুরহাটের (Rampurhat) পূর্বপাড়ার কাছে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমায় মৃত্যু হয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের। তারপরই রাতে বগটুই গ্রামে আগুন জ্বলে ওঠে। পুড়ে মৃত্যু হয় ১০ জনের। রাজ্য পুলিশের হাতে ১১ জন গ্রেপ্তার হয়। অভিযোগ, ভাদু শেখের খুনের বদলা নিতে নিরীহ গ্রামবাসীদের ঘরদোর জ্বালিয়েছে ভাদু শেখের ঘনিষ্ঠরা। রাজ্য রাজনীতিতে এই ঘটনা তোলপাড় ফেলেছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রামপুরহাটে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখানে দাঁড়িয়েই স্থানীয় ব্লক সভাপতি আনারুল শেখকে সাসপেন্ড করেন তিনি। সর্বহারা পরিবারগুলোর জন্য সরকারি চাকরি, সাহায্য ঘোষণা করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: ক্যানসার আক্রান্ত তরুণ সাংবাদিকের মৃত্যুতে মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী, টুইটে শোকবার্তা]
এরপর এই মামলা কলকাতা হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতে আবেদন জানান আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। শুনানিতে সিবিআইয়ের (CBI) তরফে জানানো হয়, “তদন্তভার নেওয়ার পরে বেশ কয়েকদিন কেটে গিয়েছে। ভাদু শেখের বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশে মানুষ হাঁটাচলা করেছে, তথ্য প্রমাণ বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” তাঁরা আরও জানান, “আমরা এই মামলার তদন্তে টাওয়ার ডাম্পিং প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি।” সিবিআই তদন্তে সায় ছিল না রাজ্য সরকারেরও। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, রাজ্য পুলিশই এই মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যথাযথ গতিতে। তবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ভাদু শেখ হত্যার তদন্ত করবে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সিবিআইয়ের হাতে ৭ জনের গ্রেপ্তারি।