গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: টাকির (Taki) ইছামতী নদীতে দুই বাংলার দুর্গা বিসর্জন নিঃসন্দেহে এক সুখস্মৃতি। বিজয়া দশমীর দিন যাঁরা এর সাক্ষী থাকেন, তাঁরাই এই আবেগ অনুভব করেন। খুব ছোট বয়সেই ইছামতীর বিসর্জনের মাঝে সৃষ্টির আবেগ টের পেয়েছিল ছোট্ট কুণাল। টাকির কাহারপাড়ার বাসিন্দা কুণাল মণ্ডল। বাবা-মায়ের কাছে এই ভাসানের গল্প শুনে আর দেখে তার অদম্য ইচ্ছা হয়, দেবী মূর্তি (Durga Puja) গড়ার। যেমন ইচ্ছে, তেমনই তার ইচ্ছেপূরণের কাহিনি এগিয়েছে সাফল্যের পথে। নদীর ধারের এঁটেল মাটি, বিচালি, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ধীরে ধীরে সে তৈরি করেছে দশভুজা। এখন স্বপ্ন একটাই। নিজের তৈরি মাতৃমূর্তি বিদেশে পাড়ি দিক।
কাঁচা হাতের কাজ নয়, টাকির সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কুণালের হাতে তৈরি মৃন্ময়ীর রূপ পেশাদার শিল্পীর মতো। খুদে হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে প্রতিমা। স্বপ্ন, তার প্রতিমা যেন বিদেশের মণ্ডপে ঠাঁই পায়। টাকির শতাব্দী প্রাচীন দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জন দেশ এবং বিদেশের ভৌগলিক মানচিত্রে ইতিমধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এই প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে সাক্ষী থাকে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকরাও। বসিরহাটের টাকি পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাহার পাড়ার বাসিন্দা বছর বারোর কুণাল বাবা, মায়ের কাছ থেকে টাকির ইছামতীতে (Ichhamati River) বিসর্জনের পুরনো ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও গল্পকথা শুনে আসছে সেই ছোট্ট থেকে। ছোট থেকে একাধিকবার ইছামতি নদীর পাড়ে বাবা-মায়ের হাত ধরে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছে সে। তার পরই নেশা জাগে প্রতিমা তৈরি করার।
[আরও পড়ুন: কানাডার জমিতে ভারতের ‘মিশন খলিস্তান’, ট্রুডোর অভিযোগে কী বলছে আমেরিকা?]
চতুর্থ শ্রেণি থেকেই খেলার ছলে হাতে মাটি নিয়ে তৈরি করতে থাকে একের পর এক ঠাকুর। এখন ছোট থেকে বড় সব প্রতিমাই অনায়াসে তৈরি করে ফেলছে এই ক্ষুদে শিল্পী। ইছামতী নদীর এঁটেল মাটি, বিচুলি, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করে ফেলেছে চার ফুটের দুর্গাও। পেশাদার শিল্পীর মতই মৃন্ময়ী রূপ দিয়েছে তাকে। এবার অপেক্ষা রং-তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুলবে মৃন্ময়ীর চিন্ময়ী রূপ।
[আরও পড়ুন: ঘনিষ্ঠ ছবি ভাইরাল করার হুমকি! যুবকের বাড়ির সামনে গায়ে আগুন, মৃত্যু ‘প্রেমিকা’র]
স্কুল যাওয়া ও পড়াশোনার মাঝে যেটুকু সময় পায় কুণাল, সেই সময়ই সারা বছর কখনও দুর্গা, আবার কখনো কালী বা সরস্বতী তৈরিতে মেতে ওঠে। বিশ্বকর্মা থেকে কার্তিক ও গণেশ সব ধরনের ঠাকুরই এই খুদে শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপে পৌঁছে যাচ্ছে। বাবা তারক মণ্ডল আগে ভ্যান চালাতেন, এখন টোটো চালান। তা থেকেই সঞ্চয় করে ছেলেকে একটু অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন তিনি। কুণাল সেই অর্থ দিয়ে তিলতিল করে গড়ে তোলে বিভিন্ন প্রতিমা। আর তা থেকে উপার্জিত অর্থ তুলে দেয় মায়ের হাতে। মা চম্পা মণ্ডল গৃহবধূ, ছোট বোন তৃষা। দুস্থ পরিবারে ছেলের শিল্পী হওয়ার স্বপ্নকে সামনে রেখে অদম্য ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে, মা-বাবা ও ছোট বোন কুণালের পাশে দাঁড়িয়েছে। যাতে আগামী দিন শিল্পীর সত্ত্বায় ফুটে ওঠে নতুন নতুন শিল্পের কারুকার্য।
দেখুন ভিডিও: