নন্দন দত্ত, সিউড়ি: প্রকল্পের সমর্থনে জনমত ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল। সেই আবহেই বুধবার নবান্নে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) আশ্বাসের ভিত্তিতে এবার রণে ভঙ্গ দিলেন দেউচা পাঁচামির কয়লাখনি প্রকল্পের বিরোধী আন্দোলনকারীরা। উঠে যেতে চলেছে তাদের ধরনা মঞ্চ। মহম্মদবাজারের ওই ধরনা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে হাতে গোনা যে দু’চারজন এখনও রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চলেছে বীরভূম (Birbhum) জেলা প্রশাসন। ‘জীবন জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা’ রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে ধরনা থেকে সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের বারোমেশিয়ায় ওই মঞ্চে সহমতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মহাসভার নেতারা। বুধবার নবান্নে এসে স্থানীয় বাসিন্দা তথা মহাসভার সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁদের আশ্বাস দেন, প্রকল্প জোর করে হবে না। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলিও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তবে উন্নয়নের প্রশ্নে সকলের সাহায্য চায় প্রশাসন। এরপরই বৃহস্পতিবার বীরভূমের মহম্মদবাজারে বৈঠকে আন্দোলন ও ধরনা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলনরত সংগঠন মহাসভার পক্ষে সাদী হাঁসদা, রতন হেমব্রমরা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা যে দাবি নিয়ে ধরনা মঞ্চে অবস্থান করছিলাম, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করে তা জানাতে পেরেছি। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই এই মঞ্চে অবস্থানের কোনও প্রাসঙ্গিকতা এখন থাকছে না।” যদিও মঞ্চের একাংশ এই ধরনা মঞ্চ তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তাই বিবৃতিতে মহাসভা জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘ধরনা মঞ্চ তুলে দেওয়াকে যারা আন্দোলন থেকে সরে আসা বলে প্রচার করছেন, তারা জেনে বা না জেনে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এটা মহাসভা ভেঙে দেওয়ার একটা চক্রান্ত।”
[আরও পড়ুন: অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হওয়ার পরই ফোনে বারবার হুমকি, পিংলায় ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় আতঙ্কে পরিবার]
দেউচা-পাঁচামির (Deucha-Pachami) প্রস্তাবিত খনি এলাকার প্রথম পর্যায়ের কাজের নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে বারোমেশিয়ায় মহাসভা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান মঞ্চ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। যাকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছে কয়েকটি সমাজসেবী সংগঠন। কিন্তু মূলত এলাকার আদিবাসীদের নিয়েই গঠিত হয়েছে মহাসভা। তাদের ৩১ জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বুধবার কলকাতা যান। সেখানেই তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই দলের প্রতিনিধি সাদী হাঁসদা, জগন্নাথ টুডু, গণেশ কিসকু, রতন হেমব্রমরা বৃহস্পতিবার বিকেলে এসে আদিবাসীদের বিষয়টি বোঝান। তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জোর করে জমি নিয়ে এলাকায় কয়লাখনি হবে না।
মহাসভার প্রতিনিধিরা জানান, গত মাসে মহম্মদবাজারের একটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি মামলা করা হয়। পাশাপাশি তৃণমূল নেতা সুনীল সোরেনের উপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। সেই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই দুটি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী সেই বিষয়েও সহানুভূতিশীল। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা ময়নামতি সোরেনের উপর বেশ কিছুদিন আগে আক্রমণ হয়েছিল তৃণমূলের তরফে, কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের উপর ভরসা রেখেই আন্দোলন থেকে সরে যেতে চান তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ওপেন করবেন কে? হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে টিম কম্বিনেশন নিয়ে চিন্তায় নাইটরা]
এলাকার উন্নয়নে আদিবাসীদের গড়ে তোলা লাহেন্তি মঞ্চের আহ্বায়ক বুদ্ধদেব হাঁসদা জানান, “আমরা চাই কয়লা খনি হোক। তারজন্য যতবার আলোচনা দরকার, ততবার বসতে রাজি। আন্দোলনের নামে হিংসাত্মক ঘটনা যেন না হয়।” অন্যদিকে ধরনা মঞ্চের একাংশ জানাচ্ছে, আলোচনা না করেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে প্রতিনিধিদল নির্বাচিত হয়েছিল। তাই কট্টর আন্দোলন না হলেও ধরনা মঞ্চটুকু রাখা হবে। মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা কার্যকর হলেই মঞ্চ সরানো হবে। তবে সিংহভাগ যেহেতু ন থেকে সরে গিয়ে ধরনা মঞ্চও তুলে নেওয়ার পক্ষে, তাই আপাতত দেউচা পাঁচামির জট পুরোপুরি কেটে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।