shono
Advertisement

যুদ্ধজয়ের পর প্রতিষ্ঠিত, দেবীপক্ষে বাস্তবের ‘উমা’দের সম্মান পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের

নানা ক্ষেত্রে মোট ৫৬ জন বিজয়িনীকে সম্মান জানাল প্রশাসন। The post যুদ্ধজয়ের পর প্রতিষ্ঠিত, দেবীপক্ষে বাস্তবের ‘উমা’দের সম্মান পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:13 PM Sep 28, 2019Updated: 08:13 PM Sep 28, 2019

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে লুপ্তপ্রায় ‘ডাকহরকরা’ শব্দটি। তবুও আজও আপন দ্যুতিতে উজ্বল একটি নাম পুতনা মুর্মু। অযোধ্যা পাহাড়ের চড়াই–উতরাই পথ বেয়ে প্রায় ৩১ বছর ধরে চিঠি বিলি করে চলেছেন এই গ্রামীণ ডাকসেবক। সেইরকমই লড়াই চালিয়ে পুরুলিয়ার লোকসংগীতের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র সরস্বতী দেবী। ঝুমুর গানে এই শিল্পী নাচনী নাচের আদিম ধারাকে ধরে রেখেছেন। এই পঁচান্ন বছর বয়সে দর্শকের মুগ্ধ দৃষ্টি টেনে রাখতে পারেন একইরকম আকর্ষণে। একইরকম সংগ্রাম করে আজ নজর কেড়েছে মানবাজার দু’নম্বর ব্লকের রেণুকা মাঝি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর পণ আদায়ের জন্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। বিবাহবিচ্ছিন্ন হয়ে যান। সেই একলা জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ সে একাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় এসে নার্স হয়ে সকলকে সেবা করার স্বপ্ন দেখে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অসুখ সারাতে শিশুকে যজ্ঞের আগুনে ফেলে খুনের অভিযোগ, গ্রেপ্তার গুনিন]

ছোট ছোট জীবনকথায় বড় বড় লড়াই জেতার সাফল্য। সেই মা ও ছোট ছোট মেয়েদের লড়াইয়ের গল্প শুনিয়ে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোট ৫৬ জন বিজয়িনীকে কুর্নিশ জানাল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। শনিবার শহর পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে দেবীপক্ষের সূচনায়, মাতৃবন্দনাকে সামনে রেখেই এই বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জাগো’। যেখানে নারীশক্তিকে সম্মান প্রদান করে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের সদস্যরা নিজেদেরকেই গর্বিত মনে করছে।

আসলে জগৎ জননীর ঘরে ঘরেই তো আজ চিন্ময়ী মা! পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই ফেললেন, “ছোট্ট মেয়ে যখন স্কুলে যায়, তখন আমার তাকে মনে হয় সরস্বতী। ঘরে থেকে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালালে, যেন লক্ষ্মী। আর কঠিন লড়াইয়ে অশুভ শক্তিকে হারিয়ে তারা দুর্গা। তাই এই ৫৬ জনকে সম্মান জানাতে পেরে আমরাই ধন্য।” জীবনযুদ্ধে বিজয়িনীদের কুর্নিশ জানিয়ে জেলাশাসক রাহুল মজুমদারও বললেন একই কথা। তাঁর কথায়, “কে বলেছে উমা কেবল কৈলাসেই থাকে? লক্ষ্মীবাঈ আর রাজিয়া সুলতানা শুধু ইতিহাসের পাতায় থাকেন? দেশের লড়াই, দশের লড়াই আজও আমরা লড়ে যাই। জাগিয়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর, শুধু দ্বীপ জ্বেলে যাই।”
এইভাবেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবের উমাদের এক মঞ্চে তুলে এক সুতোয় গাঁথল জেলা প্রশাসন। আর এই ‘জাগো’ অনুষ্ঠান থেকেই তাঁদের বার্তা দিল, লড়াই কখনো থেমে থাকে না। এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এই মা ও মেয়েদের ৫৬ জনের বিজয়িনীর তালিকায় যেমন বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া ‘কন্যাশ্রী’ রয়েছে, তেমনই আছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও। স্বনির্ভর দলগুলির লড়াই আন্দোলনে সাফল্যের ব্যাটন যে কন্যাশ্রীদের হাতে তুলে দিতে চায় প্রশাসন, সেই কথাও জানিয়ে দেওয়া হল এই মঞ্চ থেকে। তাই তো কন্যাশ্রীদের নিয়ে এই জেলার মডেল প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী বড়দি’। মানপত্র, ছাতা ও মা দুর্গার মুখোশ দিয়ে এই দশভুজাদের সম্মান জানানো হয়েছে।

[আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর উদ্বোধন ‘হাইজ্যাক’-এর আশঙ্কা, চূড়ান্ত গোপনীয়তা জেলা বিজেপির]

এখানে ছাতার মাহাত্ম্য অন্যত্র। তাঁরা যেমন লড়াই করে সমাজের ছাতার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তেমনই তাঁদের সুরক্ষাতেও সম্মাননা প্রদানে ছাতা উপহার দিয়ে একটা আলাদা বার্তা দেওয়া হয়। এদিন দিনভর ‘জাগো’–র আলোয় বিচ্ছুরিত হয়ে বাস্তবের ‘উমা’দের লড়াইয়ের সাক্ষী থাকলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সন্ধ্যারানি টুডু ও পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ফুটে উঠল ‘উমা’দের লড়াইয়ের কাহিনি। আর খুব তাৎপর্যপূর্ণভাবে শিল্পীরা গাইলেন, “জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরনধারিণী…।” গান শেষে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে তখন শোনা যাচ্ছে দেবীর পদধ্বনি।


ছবি: সুনীতা সিং।

The post যুদ্ধজয়ের পর প্রতিষ্ঠিত, দেবীপক্ষে বাস্তবের ‘উমা’দের সম্মান পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement