শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: বিজয়া দশমীর পর ফের বোধন! পুজো শেষের রেশ টেনে ফের পুজো শুরু তিস্তা পাড়ে। বুধবার একাদশীর দিনে দেবী ভাণ্ডানি রূপে একদিনের দুর্গাপুজোয় মাতলেন জলপাইগুড়ির তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।
তিথি অনুযায়ী, দশমী হয়ে দুর্গা পুজো শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। কিন্তু লোকবিশ্বাসে একাদশীর দিনেও পূজিত হলেন দেবী দুর্গা। তবে এখানে তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী দ্বিভূজা দেবী ভাণ্ডানি। কথিত আছে, আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে দশমীর রাতে কৈলাসে ফেরার পথে স্থানীয় রাখালদের ডাকে সাড়া দিয়ে একরাত সপরিবারে তিস্তা পাড়ে কাটিয়ে ছিলেন মা দুর্গা। সেই সময় ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল তিস্তা অঞ্চল। দিনের বেলায় বাঘ ঘোরাফেরা করত তিস্তা নদীর চরে। লোকমুখে কথিত আছে, সেই রাতে বাহন পরিবর্তন হয় দেবীর। সিংহের বদলে বাঘের পিঠে চড়ে একাদশীর সকাল থেকে পুজো নেন দেবী। স্থানীয়রা তাঁদের মতো করে সেদিন দেবীকে উৎসর্গ করে ছিলেন ছাগল, পায়রা। পুজো শেষে রাতে ফের কৈলাসের উদ্দেশে রওনা দেন দেবী ভাণ্ডানি। সেই বছর শস্যশ্যামল হয়ে ওঠে গোটা অঞ্চল। শস্য ভাণ্ডার ভরে যায় কৃষকদের।
[আরও পড়ুন: মহেশতলা পুরসভার গাফিলতিতে ২ কিশোরের মৃত্যু? দুর্ঘটনা ঘিরে রণক্ষেত্র বজবজ ট্রাঙ্ক রোড]
পুজো কমিটির বর্তমান সভাপতি দীনেশ চন্দ্র রায় জানান, সেই থেকে দুর্গা এখানে ভাণ্ডানি দেবী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন। দেবীর নামে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের এই এলাকা ভাণ্ডানি গ্রাম নামে পরিচিতি পায়। দীনেশবাবু আরও জানান, দুর্গাপুজোর চেয়ে ভাণ্ডানি পুজোয় বেশি আনন্দ উপভোগ করেন এই অঞ্চলের মানুষ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমান ওই এলাকায়। দিনভর চলে পুজো। পুজোকে কেন্দ্র করে বসে মেলা। সেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।
স্থানীয় কৃষক প্রাণকৃষ্ণ সরকার জানান, ছোটবেলা থেকে এই পুজো দেখে আসছেন তিনি। ভক্তি আর বিশ্বাসে প্রতি বছর বাড়ছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। পুজো কমিটির সভাপতি দীনেশচন্দ্র রায় জানান, দুর্গাপুজোর নিয়মেই পুজো হয়। বোধন থেকে বিসর্জন একদিনে সম্পন্ন হয়। বলি প্রথা এখানে চালু রয়েছে। পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। ওড়ানো হয় পায়রা। রাতে তিস্তার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন। বিজয়া দশমীর মিষ্টিমুখ সারেন ভাণ্ডানি গ্রামের বাসিন্দারা।