সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গোলাপি রঙা ১০৮ পদ্মে মায়ের চরণ সাজাতে হিমশিম অবস্থা। কারণ চাহিদা বাড়লেও জোগান নেই। তাই তো শনিবার মহাসপ্তমীতেই বাংলাজুড়ে এক-একটি পদ্মের দাম উঠল ৫০ টাকা। তা এ রাজ্যের হোক বা ওড়িশা, বেঙ্গালুরু। কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারে বাংলার এক-একটি পদ্ম ৩০ টাকাতে বিক্রি হলেও সেখান থেকে কলকাতার বিভিন্ন ছোট-ছোট ফুলবাজার, শহরতলি সহ জেলাগুলির বাজারে ওই পদ্ম ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই বাজারগুল থেকে একেবারে ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ীরা যে তাদের দোকানে পদ্ম নিয়ে আসবেন সেই সাহস দেখাতে পারছেন না। কারণ পুজো আয়োজকরা ছাড়া পদ্মের এমন চড়া দামে ঘরের নিত্য পুজোয় গৃহস্থরা তা সংগ্রহ করতে পারছেন না। পুজোয় বাংলা জুড়ে প্রায় এক কোটি পদ্মের চাহিদা থাকে। তবে শুধু পদ্ম নয়। নীল অপরাজিতা-সহ অন্যান্য ফুলের দামও বেশ চড়া।
আসলে নিম্নচাপের জেরে একাধিক জেলায় বন্যা ও বর্ষণজনিত কারণে জলাশয়ে থাকা পদ্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পদ্ম হিমঘরে যে মজুত রাখা হবে তার উপায়ও বিশেষ ছিল না। তবুও হিমঘরে কিছু মজুত রাখা হয়। যা সপ্তমীর সকাল থেকে বিক্রি হতে শুরু করে। এদিন সাতসকালে পদ্ম চাষ হওয়া জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা যায় প্যাকেট করে পদ্ম যাচ্ছে কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারের উদ্দেশ্যে। আসলে এবার সন্ধিপুজো একেবারে বিকালের দিকে। আর এই সন্ধি পুজোতেই ১০৮ পদ্মের প্রয়োজন। ফলে কাল মহাষ্টমীর সকালেও যে পদ্ম বিক্রি হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। ফলে কাল যে দাম আরও বাড়বে তা স্বীকার করে নিয়েছেন ফুল চাষি থেকে ব্যবসায়ীরা।
[আরও পড়ুন: অভিনব উদ্যোগ! পূজামণ্ডপেই শিশুদের দুগ্ধপানের জন্য আলাদা ব্যবস্থা বারুইপুরে]
সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, “দুর্গাপুজোর সময় পদ্ম যোগাড় করতে ফি বছরই এভাবে হিমশিম খেতে হয়। কারণ পুজোর আগে বরাবর বৃষ্টির কারণে ফুলের দফারফা হয়ে যায়। তবে এবার পরিস্থিতিটা বেশ খারাপ। সেই কারণেই কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারে এক একটি পদ্ম সপ্তমীর সকালে ৩০ টাকাতে বিক্রি হলেও ওখান থেকে যাওয়া পদ্ম কলকাতার বিভিন্ন বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অষ্টমীর সকালে দাম আরও বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।”
কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজার সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ফুলবাজারে এদিন রজনীগন্ধা ৪০০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বেলি ১১০০ টাকা, জুঁই ১২০০ টাকা, দোপাটি ১৭৫ টাকা,অপরাজিতা ৪০০ টাকা, লাল গাঁদা ২০০ টাকা, হলুদ গাঁদা ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। জবা ১ টাকা ৫০ পয়সা, গোলাপ ৬ টাকা প্রতি পিস। তিন ফুট সাইজের লাল গাঁদার মালা ৩০ টাকা, হলুদ গাঁদার মালা ৩৫ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হয়। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, পুজো পর্যন্ত ফুলের দাম এমন চড়াই থাকবে।
কারণ, এখনও পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়ার মতো জেলাগুলিতে যেখানে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয় সেখানকার চাষাবাদের জমিতে জল নামেনি। ফলত, ওই জমিগুলিতে আগামী দুমাস ফুল আসার কোন সম্ভাবনা নেই। নতুন করে বাগান তৈরি না করলে সেখানে ফুল আসবে না। ফলে ভিন রাজ্য থেকে ব্যাপক হারে ফুল আসছে। বর্ষনজনিত কারণ ছাড়াও সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে প্রচণ্ড গরম এবং মেঘলা আবহাওয়ার কারণেও ফুলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই কারণেই এবার দাম এমন আকাশছোঁয়া।
শুক্রবার ষষ্ঠী থেকে ট্রেনে বেঙ্গালুরু, ওড়িশার পদ্ম কলকাতায় আসে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর পদ্ম মাঝারি সাইজের হলেও গুণগত মান ভালো না থাকায় দ্রুত শুকিয়ে পড়ে। ওড়িশার পদ্ম সাদা রঙের আকৃতিতে ছোট। আর বঙ্গের পদ্ম যেমন গুণগত মান। তেমনই তার গোলাপি রঙা সৌন্দর্য। এই পদ্ম দিয়েই যে মায়ের চরণ সাজাতে চান পুজো আয়োজকরা। কিন্তু বিধি বাম! এখন হাতের কাছে যে পদ্ম মিলছে সেটাই সংগ্রহ করে রেখে দিচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা।