সুবীর দাস, কল্যাণী: এসআইআরের এনুমারেশন ফর্মফিলাপ করেছিলেন। তারপরও আতঙ্ক কাটছিল না বলে অভিযোগ। বাড়ি থেকে বেরনোও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত নিজের ঘর থেকে মিলল বৃদ্ধের গলায় ফাঁস লাগানো দেহ! এসআইআর আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল বঙ্গে। এবার নদিয়ার রানাঘাটে এই ঘটনা ঘটেছে। মৃত বৃদ্ধের নাম সুশান্ত বিশ্বাস। ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্র ও শনিবার মালদহে এই আতঙ্কে দু'জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। এবার নদিয়ার রানাঘাট এলাকায় এই ঘটনা দেখা গেল! আজ, রবিবার সকালে ওই বৃদ্ধকে ঘরের মধ্যে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
৬০ বছর বয়সী সুশান্ত বিশ্বাসের বাড়ি ধানতলা থানা এলাকার মাটিকুমড়া মধ্যপাড়ায়। মৃতের স্ত্রী নমিতা বিশ্বাসের অভিযোগ, এসআইআরের আতঙ্কে স্বামী কথাবার্তা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সারাক্ষণ এই বিষয়েই কথা বলতেন। শুধু তাই নয়, এসআইআর ফর্মপূরণ করার পরও কোনওভাবে তাঁর আতঙ্ক কাটছিল না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সুশান্ত বিশ্বাসের মায়ের নাম ছিল। তারপরও ভোটার তালিকায় নাম বাদ যাওয়ার আতঙ্ক ছিল তাঁর! ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আতঙ্কও কাজ করছিল! প্রতিবেশীরাও তাঁকে আতঙ্কিত না হতে বহুবার বুঝিয়েছিলেন। কোনও সমস্যার মুখে ওই পরিবারকে পড়তে হবে না। সেই কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনওভাবেই ওই বৃদ্ধের থেকে আতঙ্ক কাটানো যায়নি বলে খবর। ঘটনা জানাজানি হতে প্রতিবেশীরাও হতবাক। পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি বলে প্রাথমিক খবর।
এই বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক তরজা। রাণাঘাট-২বি ব্লকের তৃণমূল, সভাপতি রূপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, "এজন্য দায়ী বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্ব এসআইআর নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, যাদের ২০০২ সালে ভোটার লিস্টে নাম নেই, তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে। এমনকী ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষদের এদেশ ছেড়ে ফিরে যেতে হবে। এমনভাবে মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিজেপি।" নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি মুখপাত্র, সোমনাথ কর বলেন, "এসআইআর নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এমনভাবে প্রচার করছে, মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, বিজেপির ওপর দোষ চাপিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিভ্রান্তির থেকে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এজন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেস।"
