সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দূষণ ঠেকাতে শুধু বৃক্ষরোপণই নয়। জ্বালানিতেও অভিনব উদ্যোগ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া ও উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় বিকল্প জৈব জ্বালানি (বায়ো মাস ব্রিকেট)-র মোট চারটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওই পর্ষদ। জঙ্গলে পড়ে থাকা শুকনো পাতা থেকে বিকল্প জৈব জ্বালানির মধ্য দিয়ে ঠেকানো হবে দূষণ। রাজ্য বনবিভাগের আওতায় থাকা পশ্চিমবঙ্গ বন ও উন্নয়ন নিগমকে নিয়ে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওই পর্ষদ। তাই ওই প্রকল্প রূপায়ণে বন উন্নয়ন নিগমের দুই কর্তাকে গুজরাটে পাঠানো হয়েছে। এই পাইলট প্রকল্পের মধ্য দিয়ে শুধু দূষণ ঠেকানো নয় পরিবেশে বহুবিধ উপকার মিলবে।
একেবারে বিনামূল্যে এই জৈব জ্বালানি দেওয়া হবে যৌথ বনপরিচালন কমিটির সদস্যদের সহ বনবস্তির মানুষজনদের। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, "এই কাজে আমরা চারটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে পুরুলিয়াতেই হবে তিনটি। একটি উত্তরবঙ্গে। এই কাজের প্রকল্পে খরচ ১০ কোটি টাকা।" রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, চারটি প্রকল্পের মধ্যে পুরুলিয়াতেই রয়েছে তিনটি। পুরুলিয়া বনবিভাগের অধীন জয়পুর, কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের রঘুনাথপুর ও কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের কুইলাপাল। এছাড়া উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় এই প্রকল্প রূপায়িত করবে ওই পর্ষদ। তবে কোন জেলা তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এলাকা ঘুরে দেখা হচ্ছে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
ঝাড়খণ্ডের কলকারখানা থেকে ব্যাপক হারে দূষণ হচ্ছে। রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়া সেই দূষণের কবলে পড়েছে। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শুধু সবুজায়ন নয়। বিকল্প জৈব জ্বালানির মতো অভিনব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শীতের সময় থেকে যে শুকনো পাতা পড়তে থাকে সেই পাতা এছাড়া ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো, কৃষি বর্জ্য থেকে আরও নানান কাঁচামালে ওই বিকল্প জৈব জ্বালানি তৈরি হবে। যার আকৃতি হবে একেবারে কাঠের মত। যা গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের ব্যবহার করতে কোনভাবে সমস্যা হবে না। আসলে দীর্ঘদিন ধরে কাঠের মধ্য দিয়ে জ্বালানির কাজ করায় তা শুধু অভ্যাস নয়। মস্তিষ্কেও রয়ে গিয়েছে। তাই ওই বিকল্প জৈব জ্বালানির আকৃতি হবে একেবারে কাঠের মতই লম্বা বলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে এটি রূপায়িত হওয়ায় কোন ধোঁওয়া থাকবে না। এই কাজে বহুবিধ উপকার মিলবে।
পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, "পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পের কাঁচামাল সংগ্রহের মধ্য দিয়ে যেমন কর্মদিবস বাড়বে। তেমনই উল্টোদিকে জঙ্গলের উপর মানুষজনের নির্ভরশীলতা কমবে। জ্বালানির জন্য যেমন শুকনো পাতা আর সংগ্রহ করতে হবে না, হবে না বৃক্ষচ্ছেদন, ঘনঘন জঙ্গলে না যেতে হওয়ায় বন্যপ্রাণ- মানুষের সংঘাত কমবে। সবে মিলিয়ে জীব বৈচিত্র্য আরও উন্নত হবে।" এই বিকল্প জৈব জ্বালানিতে মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব গুজরাট একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। সেই কারণেই এই প্রকল্প নিয়ে বিশদে জানতে বন উন্নয়ন নিগমের দুই কর্তাকে গুজরাটে পাঠানো হয়। এই বিকল্প জৈব জ্বালানির বাজার ক্রমেই বাড়ছে এদেশে। ২০২৩ সাল নাগাদ এই বিকল্প জৈব জ্বালানির বাজার মূল্য ছিল ৮৩.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যা আরও বাড়বে।
