shono
Advertisement

‘চিন্তা কোরো না, ভাল আছি’, সহকর্মীর গুলিতে মৃত্যুর আগে মাকে বলেছিলেন নদিয়ার CRPF জওয়ান

সোমবার ভোরে সুকমার CRPF ক্যাম্পে সহকর্মীর গুলিতে প্রাণ হারান জওয়ান।
Posted: 05:46 PM Nov 08, 2021Updated: 05:49 PM Nov 08, 2021

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: দেশবাসীর সুরক্ষার গুরুদায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন কাঁধে। দেশের বিপদসংকুল স্থানে পোস্টিংই ছিল পছন্দের। তাই তো সুকমার সিআরপিএফ ক্যাম্পে (CRPF Camp) দিব্যি দিন কাটছিল তাঁর। কিন্তু কে-ই বা জানত সেখানেই ওঁৎ পেতে আছে মৃত্যু? অথচ বাস্তবে ঘটল তাই। সোমবার কাকভোরে সহকর্মীর এলোপাথাড়ি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল নদিয়ার (Nadia) সিআরপিএফ জওয়ান রাজীব মণ্ডলের শরীর। সকালে যখন সুদুর সুকমা থেকে নদিয়ার দেবগ্রামের বাড়িতে এল সেই খবর, তখন প্রথমটায় বিশ্বাসই হয়নি কারও। তারপর টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বোঝা গেল, খবর সত্যি। তাঁদের ছেলে আর নেই। যেন আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। দিন কয়েক আগেও যে ছেলেটা সুসংবাদ দিয়েছিল, সে আজ নেই!

Advertisement

নিহত সিআরপিএফ জওয়ান রাজীব মণ্ডল।

নদিয়ার দেবগ্রামের মণ্ডল পরিবার। বছর তিরিশের ছেলে রাজীব। দেশের কাজে ব্রতী হয়ে ২০১০ সালে আধা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, ট্রেনিং পর্ব পেরিয়ে সিআরপিএফে যোগদান। ২০১৩ সালে বিয়ে, দুই সন্তানের বাবা হওয়া। চলতি বছরই রাজীবকে সুকমার (Sukma) ৫০ নং ব্যাটেলিয়ানে ট্রান্সফার করা হয়। তাঁর ঠিকানা হয়, সুকমার মারাইগুড়ি থানার সিআরপিএফ ক্যাম্প। ভালই চলছিল সব। মাস খানেক আগে নদিয়ার বাড়িতেও ফিরেছিলেন রাজীব। আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল গোটা পরিবার।

[আরও পড়ুন: আদিবাসী নাবালিকাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ, তোলপাড় শান্তিনিকেতন]

ছুটি শেষে দেবগ্রামের বাড়ির টান কাটিয়ে সিআরপিএফ জওয়ান রাজীব মণ্ডল ফিরে যান সুকমার সিআরপিএফ ক্যাম্পে। ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে ফোনে কথা খুব কম হতো। কান্নাভেজা গলায় জানাচ্ছেন অসুস্থ মা। বলছেন, ”চারদিন আগেও ফোনে কথা হয়েছিল। বলছিল, মা চিন্তা কোরো না। আমি ভাল আছি। তোমার জন্য টাকা পাঠাচ্ছি। ভাল করে ডাক্তার দেখিও।” অসুস্থ মায়ের জন্য চিন্তা রাজীব সবসময় চিন্তিত থাকতেন। দূরে থেকেও চেষ্টা করতেন, যাতে মায়ের চিকিৎসা হয় ঠিকমতো। সোমবার সকালে বাড়িতে তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন, তখন স্ত্রী সুলেখা ছিলেন না বাড়িতে। বাপের বাড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে আসেন সুলেখা।

[আরও পড়ুন: ওয়ার্ডে ঢুকে রোগিণীর ‘শ্লীলতাহানি’, গ্রেপ্তার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী]

কী কারণে রাজীবকে এভাবে মরতে হল?  তাঁর প্রতিবেশী শাহ আলম শেখও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানালেন, সিআরপিএফ ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে ঝামেলার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। রাজীব খুব ধীরস্থির মানুষ। ও কোনও গোষ্ঠীতে থাকেনি। হয়ত সেই কারণে ওর উপর এত রাগ। রাজীবের ছোটবেলার বন্ধু মোতালেবের কথায়, ”ও খুব ভাল মনের মানুষ। বরাবর নম্র স্বভাব। জওয়ান হবো বলে আমরা একইসঙ্গে ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ও এত ভাল ট্রেনিং করেছিল যে সিআরপিএফে চান্স পেয়ে যায়। আমরা কেউ সুযোগ পাইনি।” সেই বন্ধুই যে আর নেই, ভাবতেই পারছেন না কেউ।   

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement