সুমিত বিশ্বাস ও গোবিন্দ রায়: ঝালদার (Jhalda) পুরনো থানায় অগ্নিকাণ্ড। সোমবার সকালে পুরনো থানায় আগুন লেগে যায়। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকলের একটি ইঞ্জিন। চলছে আগুন নেভানোর কাজ। পুরনো থানা থেকে ঝালদা পুরশহরের ৩৬টি সিসিটিভি ফুটেজের মনিটরিং হয়। কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনার আগে, খুনের ঘটনার দিন, খুনের ঘটনার পর ঝালদা শহরের প্রায় সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ সিট পুরুলিয়া জেলা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অধিকাংশ ফুটেজ ইতিমধ্যেই সিবিআই আধিকারিকদের হাতেও চলে গিয়েছে। তবে নতুন থানার সিসিটিভি ফুটেজের ১৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা হয় না। তাই ২৮ মার্চের আগে ওই থানার কোনও ফুটেজ পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সিবিআইকে দিতে পারেনি। ফলে তদন্তে খানিকটা সমস্যা হতে পারে। সে কারণেই ঝালদার পুরনো থানায় অগ্নিকাণ্ডকে হালকাভাবে দেখছে না সিবিআই (CBI)।
এদিন তপন কান্দুর খুড়তুতো দাদা বিশ্বনাথ কান্দুকেও তলব করে সিবিআই। তিনি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী প্রস্তাবক ছিলেন বিশ্বনাথ। সেই অনুযায়ী সোমবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে যান তিনি। প্রায় ঘণ্টাদুয়েক জেরা করা হয় তাঁকে।
তপন কান্দু খুনের তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদিন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর পিন্টু চন্দ্রকেও তলব করে সিবিআই।
এদিকে, ধৃত কলেবর সিংকে সঙ্গে নিয়ে সিবিআই প্রথমে ইলু গ্রামে যায়। একটি মদের সামনে দাঁড়ান। মদের দোকানের মালিক মলয় মণ্ডল সেই সময় উপস্থিত ছিলেন না। তারপর তোরাণ্ডে উপেন্দ্রনাথ দত্তের দোকানে যান সিবিআই। তাঁকেও পাওয়া যায়নি। কোরাং গ্রামের বাসিন্দা কামার ওরাং নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন কামার। তিনি বর্তমানে টাটাতে রয়েছেন। পুট্টি গ্রামে সুনয়না এবং জিতেন সিংয়ের বাড়িতে যায় সিবিআই। সুনয়না এবং জিতেন কলেবরের দিদি এবং জামাইবাবু। কলেবর এবং তার পরিচিত একজন ঘটনার দিন দুপুরে দিদি ও জামাইবাবুর বাড়িতে যায়। মাংস-ভাত খেয়ে বেরিয়ে আসে কলেবর ও তার পরিচিত। একাধিক জায়গায় ঘোরাফেরার পর ফের কলেবরকে নিয়ে ঝালদায় ফিরে যান সিবিআই আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: বন্ধুদের হাতে ‘খুন’ তৃণমূল কর্মী, দেহ হাসপাতালে ফেলে পালাল অভিযুক্তরা, মালদহে ব্যাপক চাঞ্চল্য]
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ বিকেলে ঝালদা-বাঘমুন্ডি সড়কপথে গোকুলনগর গ্রামের কাছে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর (Congress Councillor) তপন কান্দু। সেই সময় আততায়ীদের গুলিতে খুন হন তিনি। কংগ্রেস কাউন্সিলরের সঙ্গে ছিলেন যাদব রজক, শেফাল ওরফে নিরঞ্জন বৈষ্ণব, সুভাষ কর্মকার, প্রদীপ চৌরাশিয়া ও সুভাষ গড়াই নামে পাঁচ সঙ্গী। তাঁরা খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল নিজের ঘর থেকে শেফাল ওরফে নিরঞ্জন বৈষ্ণবের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর ঘর থেকে সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়। বারবার পুলিশি জেরার ফলে মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বলেই সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেন তিনি। এই ঘটনার ঠিক পরেরদিনই ঝালদা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।
কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের (Tapan Kandu Murder Case) প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের রহস্যমৃত্যুর জল গড়াল কলকাতা হাই কোর্টেও। কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু সোমবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে মামলা দায়েরের আবেদন জানান। প্রধান বিচারপতি মামলা গ্রহণের অনুমতি দেন। সেই অনুযায়ী বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা রুজু হয়। মামলাকারী পূর্ণিমা কান্দুর দাবি, ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হোক। কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের নিরাপত্তা দাবি করেন তিনি। মঙ্গলবার মামলার শুনানির সম্ভাবনা।