সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনা (Orissa Train Accident) যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্ম দিয়েছে, তা তো শুধুমাত্র একটিই সংকট নয়। জন্ম দেয় আরও অনেক সমস্যারই। তিন-তিনটি ট্রেন একসঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উলটেপালটে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বাড়ি ফেরার পর হিঙ্গলগঞ্জের (Hingalganj)যুবক শোনালেন তেমনই এক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া ট্রেনের নিচ থেকে উদ্ধারের পর তাঁকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ‘ফ্রি’ বাসে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও যুবকের কাছ থেকে হাজার টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও বাড়ি ফেরার পর তাঁর সমস্ত চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য।

বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাটঘরার বাসিন্দা সৈকত মণ্ডল। পরিবারের একমাত্র ছেলে। কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন সৈকত। কিন্তু বাড়িতে সমস্যা থাকায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। শুক্রবার যশবন্তপুর থেকে হাওড়াগামী হামসফর এক্সপ্রেসে ওঠেন। কিন্তু ওড়িশার বালেশ্বরে বীভৎস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেন। একাধিক ট্রেনের বগি উলটেপালটে যায়। সৈকতকে উদ্ধার করে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা (NDRF) দলের সদস্যরা। তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় আটকে পড়াদের জন্য উদ্যোগ, নিখরচায় ওড়িশা থেকে কলকাতা বাস পরিষেবা চালু]
সামান্য সুস্থ হলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। একটি বাসে উঠতে বলা হয় সৈকতকে। এই সময় তাঁর কাছে ছিল মাত্র হাজার টাকা। বাসযাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর কন্ডাক্টার সৈকতের থেকে এক হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। এও বলা হয়, টাকা না দিলে নেমে যেতে হবে। যথারীতি সেই অবস্থায় পকেটে যে টাকাটুকু ছিল, সেটাই দিতে হয়েছিল সৈকত মণ্ডলকে। কোনওমতে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর গলার পাশে, পায়ে, হাতে আঘাত রয়েছে। দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাঁর চোখে-মুখে স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি আশুতোষ কামিলা এই ঘটনা শোনামাত্রই সেই পরিবারের পাশে দিয়ে দাঁড়ান। চিকিৎসা-সহ সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দেন।
[আরও পড়ুন: ক্যানসারে আক্রান্ত দক্ষিণী মেগাস্টার চিরঞ্জীবী! কী বললেন অভিনেতা?]
দুর্ঘটনার কবল থেকে ফেরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনেরও প্রায় একইরকম অভিজ্ঞতা। হুগলির (Hooghly) উত্তরপাড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবাশিস দত্ত প্রাক্তন রেলকর্মী। ওড়িশায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনেই ছিলেন দেবাশিসবাবু ও তাঁর স্ত্রী। দেবাশিসবাবুর মতে, ভাগ্য সহায় ছিল হলে তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন। দুর্ঘটনা যখন ঘটল, তখন চারদিকে শুধু অন্ধকার আর বীভৎস শব্দই কানে এসেছিল। ট্রেনের বগি থেকে বেরিয়ে দেখেন, ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে। কোনওভাবে ট্রেন থেকে বেরিয়ে হাইওয়ের কাছে পৌঁছে বাড়ি ফেরার জন্য বাস ধরেন। তাঁর স্ত্রী এই ঘটনায় এখনও এতটাই ঘোরের মধ্যে রয়েছেন যে কথা বলতে পারছেন না।